-->

কোষবিদ্যা ০২: কোষের প্রকারভেদ ও কাজ

কোষ জীবের গাঠনিক একক। জীব জানার জন্য কোষ সম্পর্কে জানা জরুরী। সাধারণ দুই প্রকার কোষ দেখা যায়। এই আলোচনায় বিভিন্ন প্রকার কোষ নিয়ে আলোচনা করা হবে।


কোষের প্রকারভেদ

কোষকে সহজে বুঝার জন্য একটি ফ্যাক্টরির সাথে তুলনা করা যায়। এর রয়েছে অসংখ্য কর্মী, বিভাগ যারা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে। তেমনি দেহের বিভিন্ন অংশের কোষ নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কাজ করে। হৃৎপিন্ডের কোষ, রক্তের কোষ, অস্থির কোষ ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির। এই সকল অংশের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করে। কোষের কাজ বুঝার পূর্বে তার প্রকার সম্পর্কে ধারণা নেওয়া জরুরী। গঠন অনুসারে কোষ দুই প্রকার:-

১) আদি কোষ বা প্রোক্যারিওটিক কোষ

২) উন্নত বা সুকেন্দ্রীক কোষ  বা ইউক্যারিওটিক কোষ

 

প্রোক্যারিওটিক কোষ

১) প্রোক্যারিওটিক কোষে কোনো নিউক্লিয়াস নেই। এর পরিবর্তে কিছু প্রোক্যারিওটিক কোষের (যেমন, ব্যাকটেরিয়া) অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট অংশে জীনতাত্ত্বিক উপাদানগুলো মুক্তভাবে থাকে। এই অংশকে নিউক্লিওড বলে। এককথায় নিউক্লিয়াসের পরিবর্তে নিউক্লিওডে জীনতাত্ত্বিক তথ্যগুলো বিদ্যমান থাকে।

২) এককোষী ক্ষুদ্রজীব প্রোক্যারিওটিক কোষ দিয়ে গঠিত। যেমন, আর্কিয়া, ব্যাকটেরিয়া এবং সায়ানোব্যাকটেরিয়া।

৩)   কোষের ব্যাসের আকার ০.২ মাইক্রোমিটার থেকে ০.৫ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে।

৪) এদের বংশগতির ধারক হিসেবে ডিএনএ বা আরএনএ হতে পারে।

৫) সাধারণত বাইনারি ফিশন প্রক্রিয়ায় প্রোক্যারিওটিক কোষের বংশবিস্তার ঘটে। এটি একপ্রকার অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়া।

প্রোক্যরিওটিক কোষের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ব্যাকটেরিয়া কোষ যা নিচে উল্লেখ করা হলো। 


 

ব্যাকটেরিয়া কোষ

Ø এককোষী জীব যা  মাটি থেকে শুরু করে মানবদেহ তথা সমগ্র পৃথিবীতে পাওয়া যায়।

Ø এদের গঠন ও আকৃতি ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে

Ø এদের কোষপ্রাচীর পেপটিডোগ্লাইক্যান দিয়ে গঠিত যা দিয়ে কোষ প্রাচীরের আকার গঠিত হয়।

Ø ব্যাকটেরিয়ার কিছু স্বতন্ত্র গাঠনিক উপাদান আছে। যেমন, পিলি, ফ্ল্যাজেলা, ক্যাপসুল

Ø তাদের দেহে প্লাজমিড থাকে

Ø তারা দৃঢ় ও সুপ্ত কাঠামো গঠন করতে পারে যা এন্ডোস্পোর নামে পরিচিত। মূলত প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার জন্য ব্যাকটেরিয়া এই গঠন লাভ করে। অনুকূল পরিবেশে আবার এন্ডাস্পোর সক্রিয় হয়।

 

ইউক্যারিওয়টিক কোষ

১) ইউক্যারিওটিক কোষে প্রকৃত নিউক্লিয়াস থাকে

২) কোষের ব্যাসের আকার ১০ মাইক্রোমিটার থেকে ১০০ মাইক্রোমিটার হয়ে থাকে।

৩) প্লাজমা মেমব্রেন কোষের বাইরে থেকে ভিতরে পুষ্টি ও ইলেক্ট্রলাইট পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এটি কোষের সাথে কোষের পারস্পারিক যোগাযোগরে জন্য দায়ী।   

৪) যৌন ও অযৌন প্রজনন প্রক্রিয়ায় বংশবিস্তার হয়

৫। প্রাণী ও উদ্ভিদের মতো প্রায় উন্নত সকল জীব এই কোষ দিয়ে গঠিত। তবে উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। যেমন, উদ্ভিদ কোষে ক্লোরোপ্লাস্ট , কেন্দ্রীয় গহ্বর ও অন্যান্য প্লাস্টিড থাকে যা প্রাণীকোষে থাকে না।

চারদিকে দৃশ্যমান জীবমন্ডলের অধিকাংশ ইউক্যারিওটিক কোষ দিয়ে গঠিত। তাই ইউক্যারিওটিক কোষ নিয়ে অধিক আলোচনা জরুরী। এবারে আমরা ইউক্যারিওটিকে কোষের দুইটি বৃহত্তর শাখা উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণী কোষ নিয়ে আলোচনা করব।

 

উদ্ভিদ কোষ

উদ্ভিদ কোষ এক প্রকার ইউক্যারিওটিক কোষ। এই কোষ দিয়ে কিংডমের আওতাধীন জীব দেহ গঠিত। উদ্ভিদ কোষের অন্যতম প্রধান কাজ সালোকসংশ্লেষণ ঘটনা। এটি এমন একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গাছ আলোক শক্তি ব্যবহার করে জৈব উপাদান (শর্করা) প্রস্তুত করে এবং অক্সিজেন বিমুক্ত করে। প্রাণী কোষের সাথে তুলনা করলে উদ্ভিদ কোষে দুইটি ভিন্ন উপাদান তাকে। এর একটি কোষ প্রাচীর যা কোষকে দৃঢ় করে এবং সঠিক আকৃতি প্রদান করে। অন্যটি ক্লোরোপ্লাস্ট যার মাধ্যমে গাছ তার দেহের জন্য প্রয়োজনীয় শর্করা তৈরী করে।

উদ্ভিদের কোষ নিয়ে আরোও যে বিষয়গুলো জানা জরুরী তা হলো-

·        কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রাণী কোষের সাথে উদ্ভিদ কোষের মিল রয়েছে। যেমন, তারা উভয়েই ইউক্যারিওটিক কোষ, এদের প্রত্যেকের নিউক্লিয়াস আছে যা জীনতাত্ত্বিক তথ্য ধারণ করে, মেমব্রেন ও  সাইটোপ্লাজম থাকে।

·        উদ্ভিদ কোষে কেন্দ্রীয় গহ্বর থাকে যা গাছের টিকে থাকার জন্য অতি প্রয়োজন। এটি পানি দিয়ে পূর্ণ থাকে। কিছু কিছু কোষের কেন্দ্রীয় গহ্বর আকারে অনেক বড় হয়।  

·        অন্যতম উপাদান হিসেবে ক্লোরোপ্লাস্ট থাকে। এটি এক প্রকার প্লাস্টিড যার ফলে রঙ সবুজ হয়, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শর্করা তৈরী করে।

·        এই কোষে গ্লাইঅক্সিসোম থাকে। এটি বীজের অঙ্কুরোদগমের সময় চর্বি ভেঙে প্রয়োজনীয় শর্করা সরবরাহ করে।

·         উদ্ভিদ কোষে সেলুলোজ নির্মিত কোষ প্রাচীর থাকে। একারণে কোষের পারসস্পারিক যোগাযোগের জন্য প্লাজমোডেজমাটা থাকে।  

প্রাণী কোষ

প্রাণী কোষ এক প্রকার ইউক্যারিওটিক কোষ যা প্রাণীর টিস্যু তৈরী করে। এটি প্রাণী দেহের পুষ্টি ও প্রজননসহ সার্বিক কাজের সাথে জড়িত। ইতিমধ্যে উল্লেখ করা  হয়েছে যে, প্রাণী ও উদ্ভিদ কোষে সুগঠিত নিউক্লিয়াস থাকে। তবে কোষ দুইটির মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে। যেমন, প্রাণী কোষে কোষ প্রাচীর নেই। এছাড়াও প্রাণী কোষের সাতে যে বিষয়গুলো জড়িত তা  হলো-

·        প্রাণী কোষ খাদ্য ও পুষ্টির জন্য অন্য জীবের উপর নির্ভর করে। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের মতো নিজে নিজে খাদ্য তৈরীর কোনো কৌশল প্রাণী কোষে নেই।

·        প্রতিটি প্রাণী কোষে তিনটি প্রধান অংশ থাকে: কোষ প্রাচীর, সাইটোপ্লাজম এবং নিউক্লিয়াস। এছাড়াও কোষে অন্যান্য উপাদান থাকে যার উপর কোষের ক্রিয়া নির্ভর করে।

·        এই কোষ পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে নির্দিষ্ট কাজ করতে পারে। যেমন একাধিক কোষ কোনো একটি নির্দিষ্ট টিস্যু তৈরী করে।

·        প্রাণী কোষে সেলুলোজ দিয়ে গঠিত কোষ প্রাচীর নেই।

 

কোষের কাজ

কোষ বহুবিধ কাজের সাথে জড়িত। এর মধ্যে অন্যতম কাজগুলো আলোচনা করা হলো।

গঠন ও আকার দান

আমরা জানি একটির পর একটি সাজিয়ে বহুতল ভবন তৈরি করা হয়। ঠিক তেমনি কোষ দিয়ে জীব দেহ গঠিত হয়। পাশাপাশি কোষ জীবের দৃঢ়তা প্রদানের পাশাপাশি সঠিক আকার প্রদান করে। কোলেনকাইমা ও স্কেলেরেনকাইমা কোষ দৃঢ়তা প্রদান করে।  

বৃদ্ধি

জটিল জীব যেমন মানুষের দেহে অসংখ্য কোষ বিশেষ প্রক্রিয়ায় টিস্যু গঠন করে। তবে, জীবের বৃদ্ধির জন্য কোষ দায়ী। কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন নতুন কোষ ‍উৎপন্ন করে যা জীবের ‍বৃদ্ধি ঘটায়।

 

পরিহন

কোষের অভ্যন্তরের বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ার জন্য পুষ্টি উপাদান শোষণ করে। রাসায়নিক ক্রিয়া শেষে কিছু উপাদান বর্জ্য পদার্থ হিসেবে নির্গত হয়। কোষ এই সকল পদার্থ বাইরে নিগর্মন করে। এভাবে কোষের অভ্যন্তরের বিভিন্ন উপাদান পরিবাহিত হয়। এইভাবে ক্ষুদ্রাকার অণু যেমন অক্সিজেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং ইথানল ব্যপন প্রক্রিয়ায় কোষীয় মেমব্রেনের মধ্য দিয়ে কোষের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। এই প্রক্রিয়া পরোক্ষ পরিবহন নামে পরিচিত। অন্যদিকে বৃহৎ অণু যেমন প্রোটিন এবং পলিস্যাকারাইড কোষের ভিতরে-বাইরে পরিবাহিত হয় যা প্রত্যক্ষ পরিবহন।

শক্তি উৎপাদন

কোনো একটি জীব দেহের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া সম্পাদনের জন্য শক্তি প্রয়োজন। কোষ এই প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেয়। উদ্ভিদ দেহে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় শক্তি পাওয়া যায়। অন্যদিকে প্রাণীদেহে শ্বসন প্রক্রিয়ায় এই শক্তি লাভ করা যায়।

 

সম্পাদনা: মোঃ রফিকুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক, বায়োলজি স্কুল

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.