চন্দ্রযান-৩: চাঁদের
দক্ষিণ মেরুর প্রথম নভোযান
ভারতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইসরোর বিজ্ঞানীরা চাঁদে মহাকাশযান প্রেরণের লক্ষ্যে
গবেষণা পরিচালনা করছেন বেশ সময় ধরে। তাদের চন্দ্রযান গবেষণা ‘লুনার এক্সপ্লোরেশন প্রোগ্রাম’
নামে পরিচিতি। এই প্রোগ্রামের আওতায় বিজ্ঞানীরা চাঁদের অভিমুখে মোট তিনটি মহাকাশযান
প্রেরণ করেছেন। ২০০৮ সালে এই প্রোগ্রামের আওতায় চন্দ্রযান-১ প্রেরণ করা হয়। চন্দ্রযান-১
সফলভাবে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছিল। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ প্রেরণ করে
হয়। তবে চন্দ্রযান-২ এর ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের বুকে নামার চেষ্টা করার সময় ব্রেকিং
সিস্টেমে কিছু অসঙ্গতির কারণে সেটি চাঁদের বুকে বিধ্বস্ত হয়।
মূলত ধারাবাহিক গবেষণার ফলোআপ হিসেবে চন্দ্রযান-৩ চাঁদের উদ্দেশ্যে
প্রেরণ করা হয়। এর প্রধাণ লক্ষ্য ছিল- নিরাপদে চন্দ্রপৃষ্টে অবতরণ করে চন্দ্রপৃষ্ট
থেকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনা করা। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণার তথ্য অনুযায়ী চন্দ্রযান-৩
অভিযানে ৬১৫ কোটি ভারতীয় রুপি বা ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের মতো খরচ হয়েছে।
চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। একটি ল্যান্ডার
মডিউল (এল এম), একটি প্রোপালশন মডিউল (পিএম) আর একটি রোভার। মহাকাশযানের ল্যান্ডার
মডিউল রোভারটিকে ধারণ করে। চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানটির ল্যান্ডার মডিউলের নাম ‘বিক্রম’
এবং রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডার বিক্রম নাম দেওয়া হয় বিজ্ঞানী বিক্রম সারাভাইয়ের
নামানুসারে যাকে ভারতের মহাকাশ গবেষণার জনক বলে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে ‘প্রজ্ঞান’
শব্দের অর্থ জ্ঞানী। রোভার অনেক দক্ষ ও চন্দ্রপৃষ্ঠে ঘুরে ঘুরে তথ্য অনুসন্ধান করবে
সেই বিবেচনায় ‘প্রজ্ঞান’ নাম দেওয়া হয়েছে।
চাঁদের বুকে অবতরণের পর ল্যান্ডার মডিউলের দরজা খুলে যাবে এবং
রোভার ‘প্রজ্ঞান’ চাঁদের বুকে পরিভ্রমণের জন্য মুক্ত হবে। ল্যান্ডার মডিউল একটি জায়গায়
স্থির থাকবে এবং রোভার প্রজ্ঞান ঘুরে বেড়াবে, চৌদ্দদিনের পরিভ্রমণে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ
করবে। ল্যান্ডার মডিউলের শক্তির উৎস হিসেবে সৌরশক্তির ব্যবহার হয়েছে। পৃথিবীর হিসেবে
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে চৌদ্দদিন সৌরালোক থাকে। তাই বিজ্ঞানীরা এমনভাবে ল্যান্ডার মডিউলের
মডেল তৈরী করেছেন যেন চৌদ্দদিন সূর্যের আলো ব্যবহার করে শক্তিলাভ করবে। রোভার ‘প্রজ্ঞান’
চাঁদের বুকে পরিভ্রমণ করে বিভিন্ন তথ্য, ছবি ল্যান্ডার মডিউল বিক্রমে পাঠাবে এবং বিক্রমে
রাখা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে ইসরোর বিজ্ঞানীরা সকল তথ্য লাভ করবে। ল্যান্ডার ও রোভারের
সাথে পেলোড নামে বিশেষ যন্ত্র আছে যারা চন্দ্র পৃষ্টের বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করবে।
চন্দ্রযান-৩ তে সাতটি পেলোড রয়েছে। বিক্রম ল্যান্ডারে চারটি এবং রোভার প্রজ্ঞানে দুইটি
পেলোড রয়েছে। অন্য একটি পেলোড আছে পোপালশনের মডুউলের সাথে। এই পোপালশন মডুউলে চড়েই
বিক্রম ল্যান্ডার ও রোভার পৃথিবী থেকে চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করেছে।
পেলোডের চোখে চাঁদ পর্যবেক্ষণ
চাঁদে নিয়ে নতুন তথ্য অনুসন্ধানের
লক্ষ্যে পুরো মহাকাশযানটি অতি আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। চাঁদের আবহাওয়া, ভূ-পৃষ্ট এবং পানির উপস্থিতি অনুসন্ধানে
দক্ষিণ মেরুর হিমশীতল বরফ নিয়ে গবেষণা করবে চন্দ্রযান-৩। এসকল গবেষণা পরিচালনার জন্য
মহাকাশযানে যুক্ত করা হয়েছে সাতটি পেলোড। এটি হলো এক প্রকার বৈজ্ঞানিক যন্ত্র যার মাধ্যমে
বিভিন্ন প্রকার গবেষণা পরিচালনা করা হয়। বলা হয়ে থাকে, মহাকাশযানের প্রাথমিক কাজ সম্পাদন
করে এসকল পেলোড। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রেরিত মহাকাশযানে সাতটি পেলোড আছে। এর মধ্যে
চারটি ল্যান্ডার বিক্রমের সাথে যুক্ত, দুইটি রোভার প্রজ্ঞানের সাথে এবং অন্যটি ল্যান্ডারকে
চাঁদের কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া পোপালশন মডুউলের সাথে যুক্ত রয়েছে। পেলোডগুলো বিজ্ঞানীদের
উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করবে।
বিক্রম ল্যান্ডারের সাথে যুক্ত চারটি
পেলোড হলো Chandra’s Surface
Thermophysical Experiment (ChaSTE), Thermophysical Experiment (ChaSTE),
Instrument for Lunar Seismic Activity (ILSA), The Laser Retroreflector Array
(LRA) এবং
Radio Anatomy of Moon Bound Hypersensitive ionosphere and Atmosphere (RAMBHA). এর মধ্যে নাসার সরবরাহ করা পেলোড হলো LRA
।
Radio Anatomy of
Moon Bound Hypersensitive ionosphere and Atmosphere (RAMBHA) হলো Langmuir
Probe (অনবোর্ড স্যাটেলাইট বৈজ্ঞানিক যন্ত্র) প্রকৃতির
পেলোড। সাধারণত রাম্বা আয়নিত কণা যেমন ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের প্রকৃতি পরিমাপ করবে। পাশাপাশি
প্লাজমা অবস্থায় এই সকল আয়নের ঘনত্ব নির্ণয় করবে। প্লাজমা হলো পদার্থের চতুর্থ অবস্থা।
কঠিন,তরল ও বায়বীয় অবস্থার পর পদার্থের একটি প্রকৃতি হলো প্লাজমা। সাধারণত প্লাজমা
তড়িৎক্ষেত্রে উচ্চতাপীয় গ্যাসরূপে বিদ্যমান থাকে এবং আয়নিত ইলেক্ট্রন ও প্রোটন ধারণ
করে। চাঁদ প্লাজমা অবস্থা দিয়ে পরিবেষ্টিত। তাপীয় অবস্থায় ইলেক্ট্রন দ্রুত বেগে গতিশীল
হয়। এছাড়ায় চন্দ্রপৃষ্টে ইলেক্ট্রনের আধিক্য দেখা যায়। চন্দ্রপৃষ্ট ধূলিকণা পরিবেষ্টিত,
তবে চাঁদের সকল অঞ্চলে প্লাজমার বিস্তৃতি ও ঘনত্ব সমান নয়। সূর্যের প্রভাবে চাঁদের
বায়ুমন্ডলের প্লাজমা অবস্থা পরিবর্তিত হয়। কিভাবে প্লাজমা অবস্থা পরিবর্তিত
হয় তা RAMBHA পেলোড নির্ণয় করবে।
বিক্রম ল্যান্ডারের দ্বিতীয় পেলোডটি
হলো Chandra’s Surface Thermophysical
Experiment (ChaSTE)। এটি চাঁদের তাপের পরিবাহিতা ও পৃষ্টের
তাপমাত্রা পরিমাপ করবে। চন্দ্রপৃষ্টের ধূলিকণা থেকে উল্লম্ব বরাবর তাপমাত্র বৃদ্ধি
পায় তা ChaSTE নির্ণয় করবে। এছাড়াও চন্দ্রপৃষ্ট কী পরিমাণ তাপ সহনশীল তা নির্ণয় করার চেষ্টা করবে।
পেলোডে সেন্সর যুক্ত থার্মাল প্রোব আছে চাঁদের মাটিতে প্রায় ১০ সে.মি. গভীরে প্রবেশ
করতে পারে। Instrument for
Lunar Seismic Activity (ILSA) নামক পেলোডটি চন্দ্রপৃষ্টে ল্যান্ডারের
অবতরণ স্থানের চারপাশের কম্পন পরিমাপ করবে। চাঁদে সাধারণত সম-কম্পন (Moonquakes) পরিলক্ষিত হয়
না। চাঁদে কোনো টেকনোটিক প্লেট নেই। তবে চাঁদ শীতল হয় ও সংকুচিত হয় এবং প্রতিনিয়ত পৃথিবী
চাঁদকে আকর্ষণ করে। এসকল কারণে চাপ অবমুক্ত হয় যা কম্পন আকারে শক্তি উৎপন্ন করে। ILSA পেলোডটি চাঁদের
সামান্য স্থানচ্যুতি সনাক্ত করতে পারবে। পাশাপাশি এটি চন্দ্রপৃষ্ঠের কম্পনের বেগ পরিমাপ
করবে।
চতুর্থ পেলোড The Laser Retroreflector Array (LRA). এটি যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসার দেওয়া রিফ্লেক্টর অ্যারে।
এটি চাঁদের লেজার সীমা নিয়ে গবেষণা করবে। লেজার সীমা নির্ণয়ে কোনো একটি উৎস থেকে কোনো
দুরবর্তী প্রতিফলক বিবেচনা করে লেজার রশ্মি নির্গত করা হয়। এরপর প্রতিফলকে বাঁধাপ্রাপ্ত
হয়ে কত সময়ে আলো উৎসে ফিরে আসে তা পরিমাপ করা হয়। চাঁদ কত বেগে পৃথিবীকে আবর্তন করে
তার সঠিকতা নির্ণয়ে এই গবেষণা সহযোগিতা করতে পারে। পাশাপাশি চাঁদের কোনো নির্দিষ্ট
বিন্দু থেকে পৃথিবীর সঠিক দুরুত্ব নির্ণয়ে এই গবেষণা বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। মূলত
এই প্যালোডের মাধ্যমে অভিযানের মূল গবেষণার বাইরে চাঁদ ও পৃথিবীর গতিবিধি সম্পর্কিত
অধিক ফলপ্রসূ তথ্য জানা যাবে।
ল্যান্ডার বিক্রম পেলোড ছাড়াও একটি
যন্ত্র বহন করছে। Lander Hazard Detection
and Avoidance Camera (LHDAC) নামের যন্ত্রটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন
ক্যামেরা। এই ক্যামেরা চন্দ্রপুষ্টে ল্যান্ডারের অবতরণের জন্য নিরাপদ স্থান খোঁজার
কাজ করেছে। এছাড়াও এই ক্যামেরা দিয়ে চন্দ্রপৃষ্টের বেশ কয়েকটি ছবি উঠানো হয়েছে যা ইসরো
ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে।
অন্যদিকে রোভার ‘প্রজ্ঞান’ ছয় চাকায়
ভর করে ল্যান্ডার থেকে র্যাম্প করে চাঁদের বুকে নামবে এবং চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ঘুরে
বেড়াবে। পাশাপাশি পৃথিবীর হিসেবে চৌদ্দদিন বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষা তথা গবেষণা করবে।
রোভারে সংযুক্ত দুইটি পেলোডের মধ্যে
অন্যতম হলো Alpha Particle X-ray
Spectrometer (APXS). এই পেলোড চন্দ্রপৃষ্টের বিভিন্ন উপাদান
সনাক্ত করবে। পেলোডে যুক্ত x-ray
fluorescence spectroscopy এর মাধ্যমে চারপাশে এক্সরে বা আলফা
কণা নিক্ষেপ করা হবে যা পৃষ্ঠকে উত্তেজিত করবে বা শক্তি প্রবাহিত করবে। এক্সরে রশ্মি
নিঃসরণে কুরিয়াম কণা ব্যবহার করা হয়েছে। এই পেলোডের মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্টের প্রধান প্রধান
কণা যেমন অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকা, আয়রন, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, টাইটেনিয়াম,
স্ট্রোনটিয়াম, ইট্রিয়াম ও জারকোনিয়াম কণার
উপস্থিতি সনাক্ত করা হবে।
রোভার প্রজ্ঞানে যুক্ত অন্য একটি পেলোড
Laser Induced Breakdown
Spectroscope (LIBS). এই পেলোডে প্রথম পেলোলেডা মাধ্যমে
সনাক্তকৃত উপাদানের আধিক্য নির্ণয় করবে। এই যন্ত্র চন্দ্রের মাটির বিভিন্ন প্রান্তে
উচ্চ শক্তির লেজার রশ্মি নিক্ষেপ করবে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন উপাদানের ঘনত্ব নির্ণয়
করা হবে।
ল্যান্ডার ও রোভারের বাইরে চন্দ্রযান-৩
এর প্রোপালশন মডুউলে একটি পেলোড যুক্ত করা হয়েছে। চাঁদের কক্ষপথ থেকে প্রোপালশন মডুউলের
সাথে যুক্ত ল্যান্ডার বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং প্রোপালশন মডুউল চাঁদের কক্ষপথে পরিভ্রমণ
করছে। প্রোপালশন মডুউলের সাথে Spectro-polarimetry of HAbitable Planet Earth
(SHAPE) পেলোড যুক্ত আছে। প্রোপালশন মডুউল বেশ কয়েক মাস (বা বছর) চাঁদের কক্ষপথে পরিভ্রমণ
করবে। পাশাপাশি তার সাথে যুক্ত পেলোডের মাধ্যমে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ও মেঘমালাতে স্পেকট্রোস্কপি
ও পোলারাইজেশন গবেষণা পরিচালনা করবে।
চন্দ্রযান-৩ ভ্রমণ পথ: কোনবা পথে চাঁদের বুকে যায়?
চন্দ্রযান-৩ এর
যাত্রা শুরু হয়েছিল গত ১৪ জুলাই। ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর ২ টা ৩৫ মিনিটে অন্ধ্র
প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সাতিশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে চাঁদের পথে রওনা দেয়
নভোযানটি। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্স অর্গানাইজেশনের নির্মিত লঞ্চ ভিকল মার্ক-৩ (LVM-3) দিয়ে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপন করা
হয়। উৎক্ষেপনের ৯৬৯.৪২ সেকেন্ড পর ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১৭৯.১৯২ কিলোমিটার উচ্চতায় উপগ্রহ
পৃথকীকরণ হয়। এরপর মহাকাশযানটি পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপিত হয় এবং পৃথিবীর কক্ষপথে
পরিভ্রমণরত থাকে। মহাকাশযানটি পৃথক পৃথক পাঁচটি কক্ষপথে পৃথিবীকে পরিভ্রমণ করে। ১৫
জুলাই ২০২৩ খ্রি. এটি ৪১৭৬২ কি.মি. X ১৭৩ কি.মি. কক্ষপথ (প্রথম) পরিভ্রমণ করে, ১৭ জুলাই ২০২৩
খ্রি. ৪১৬০৩ কি.মি. X ২২৬ কি.মি.
কক্ষপথ (দ্বিতীয়) পরিভ্রমণ করে, ১৮ জুলাই ২০২৩ খ্রি. ৫১৪০০ কি.মি. X ২২৮ কি.মি. কক্ষপথ (তৃতীয়) পরিভ্রমণ করে,
১৮ জুলাই ২০২৩ খ্রি. ৭১৩৫১ কি.মি. X ২৩৩ কি.মি. কক্ষপথ (চতুর্থ) পরিভ্রমণ করে, ২৫ জুলাই ২০২৩
খ্রি. ১২৭৬০৩ কি.মি. X ২৩৬ কি.মি. কক্ষপথ (পঞ্চম) পরিভ্রমণ করে।
এরপর ১ আগস্ট ‘ট্রান্সলুনার
ইঞ্জেকশন’-এর মাধ্যমে পৃথিবীর আকর্ষণ অতিক্রম করে চাঁদের পথে যাত্রা করে। এরপর ০৫
আগষ্ট মহাকাশযানটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করে এবং চাঁদের পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন
কক্ষপথ পরিভ্রমণ করে। ০৬ আগষ্ট ২০২৩ খ্রি. এটি চাঁদের ৪৩১৩ কি.মি. X ১৭০ কি.মি. কক্ষপথ পরিভ্রমণ করে। ০৯
আগষ্ট ২০২৩ খ্রি. এটি চাঁদের ১৪৩৭ কি.মি. X ১৭৪ কি.মি. কক্ষপথ পরিভ্রমণ করে, ১৪ আগষ্ট ২০২৩ খ্রি. এটি
চাঁদের ১৭৭ কি.মি. X ১৫০ কি.মি. কক্ষপথ
পরিভ্রমণ করে, ১৬ আগষ্ট ২০২৩ খ্রি. এটি চাঁদের ১৬৩ কি.মি. X ১৫৩ কি.মি. কক্ষপথ পরিভ্রমণ
করে।
১৭ আগষ্ট ২০২৩
খ্রি.-এ প্রোপালশন মডুউল থেকে ল্যান্ডার বিক্রম (যার অভ্যন্তরে রোভার প্রজ্ঞান
আছে) আলাদা হয়ে যায়। ল্যান্ডিং প্রপালশন মডিউল আলাদা করার পর ল্যান্ডারটিকে চাঁদের
১০০X৩০ কিলোমিটার কক্ষপথে নিয়ে আসা হয়। এরপর গতি কমানোর কাজ শুরু হয়। অতঃপর ২৩
আগষ্ট চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফলভাবে ল্যান্ডারের সফট ল্যান্ডিং হয়। চন্দ্রযান-২ এর
অভিজ্ঞতা বিবেচনায় নিয়ে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রমের পা অনেক বেশি মজবুত করা
হয়েছে। এর কারণ হলো যে চাঁদে অবতরণের সময় কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়।
চন্দ্রযান-৩ অভিযানের উদ্দেশ্য
কী?
অধিকাংশ সময় অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকা চাঁদের দক্ষিণ মেরু বিজ্ঞানীদের
কাছে রহস্য। পৃথিবীর হিসেবে ১৪ দিন সূর্যের আলো থাকা এই প্রান্তে জমাট বাঁধা বরফ আছে
বলে ধারণা করা হয়। এর অর্থ হলো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পানির উপস্থিতির সম্ভাবনা রয়েছে।
পাশাপাশি চন্দ্রপৃষ্ঠে ক্রমাগত ধূমকেতু এবং গ্রহাণুর বর্ষণ হচ্ছে। মহাজাগতিক এই বস্তুগুলো
যখন চন্দ্রপৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়, তখন আইস ও ‘মিসিং পার্টিকল’ অপসারিত হয়। ফলে অসংখ্য
কণা যেমন অ্যালুমিনিয়াম, ক্যালসিয়াম, সিলিকা, আয়রন, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, টাইটেনিয়াম,
স্ট্রোনটিয়াম, ইট্রিয়াম ও জারকোনিয়াম কণার
উপস্থিতি সনাক্ত করা হবে। একইসাথে এটি আয়নিত কণা যেমন ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের প্রকৃতি
পরিমাপ করে। এটি চাঁদের তাপের পরিবাহিতা ও পৃষ্টের তাপমাত্রা পরিমাপ করবে। পাশাপাশি
পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ও মেঘপুঞ্জে বায়োসিগনেচার বিশ্লেষণের আগ্রহ রয়েছে এই অভিযানের মাধ্যমে।
সম্পাদনা: মোঃ রফিকুল ইসলাম, বিজ্ঞান কর্মী ও মহাকাশ ভ্রমণে সুযোগ পাওয়া প্রথম বাংলাদেশী ছাত্র; অনূদিত
বই: বীজগণিত সমগ্র (১ম ও ২য় খন্ড), ক্যাম্পবেল বায়োলজি (প্রাণরসায়ন ইউনিট), ক্যাম্পবেল
বায়োলজি (কোষ ইউনিট), হোয়াট অ্যা প্লান্ট নোজ।
সূত্র: নেচার,
বিবিসি, ইসরো, রয়টার্স, আল জাজিরা, দ্য প্রিন্ট, ভয়েস অব অ্যামেরিকা, ইন্ডিয়া টুডে,
ডয়চে ভ্যালে, ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস।
|