-->

সবজি ও ফলের মাছি পোকা দমন করবেন কীভাবে?

ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড় বড় ধরণের সমস্যার সৃষ্টি করে। আপনার স্বপ্নের ফসল ঘরে আনার অনিশ্চয়তার কারণ  হয় বিভিন্ন প্রকার পোকা। তন্মাধ্যে ফল ও সবজির জন্য মাছি পোকা একটি জটিল সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। এই ক্ষুদ্র পোকা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করতে পারে। আপনার কষ্টের সবজি ও ফসলে আক্রমণ করে পুরো সবজি-ফল বিনষ্ট করে। আজকের আলোচনায় আমরা সবজিতে মাছি পোকার আক্রমণ  ও তা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে আলোচনা করব। 


 সবজিতে মাছি পোকা

মাছি পোকা অতি ক্ষুদ্রাকার কীট। আমাদের বসতবাড়ি ও ফসলের ক্ষেতে প্রায়শেই এদের দেখা যায়। বিশেষ করে পরিপক্ক ফল ও সবজির প্রতি মাছি বেশি আকৃষ্ট হয়। লাল চোখ ও হলদে শরীরের বর্ণ দেখে মাছি পোকা সনাক্ত করা যায়। তবে এরা আকারে খুব দ্রুত এবং দ্রুত বেড়ে উড়ে বেড়ায়। মজার বিষয় হলো মাছি পোকার জীবনকাল খুব কম, মাত্র ৮-১০ দিন। তবে তারা খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে, একইসময়ে স্ত্রী মাছি ৫০০ টি ডিম পাড়ে। 


 মাছি পোকা কোথায় দেখা যায়?

ফসলের ক্ষেত্রে মাছি পোকা পাওয়া যায়। বিশেষ করে পাকা সবজি ও ফলে এর উপস্থিতি লক্ষণীয়। পাশাপাশি বসতবাড়িতে বিভিন্ন মৌসুমে মাছি পোকা উড়তে দেখা যায়। তারা পাকা সবজি ও ফলের প্রতি আকৃষ্ট হয়। পাশাপাশি গাঁজন হওয়া পানীয় ও অন্যান্য চিনিজাতীয় পদার্থের প্রতি মাছি পোকার আকর্ষণ আছে। বসতবাড়ির উন্মুক্ত জায়গা যেমন জানালা, দরজা দিয়ে বাড়িতে মাছি পোকা প্রবেশ করে। বিশেষ করে বাড়িতে পাকা আম, কাঁঠাল, মিষ্টিকুমড়া, টমেটো প্রভৃতি থাকলে মাছি পোকার উপস্থিতি দেখা যায়। মাছি পোকা ড্রেন, ময়ল আবর্জনার স্তুপ, স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে বংশবিস্তার করে। পাশাপাশি কৃষি পণ্য রপ্তানি-আমদানির সময় কন্টেইনার/প্যাকেটের মাধ্যমে এক দেশ থেকে আরেক দেশে মাছি পোকার বিস্তৃতি ঘটতে পারে। আক্রমণের প্রাথমিক ধাপে মাছি পোকা খাদ্যের উচ্ছিষ্ট, স্যাঁতস্যাঁতে জৈব পদার্থ যেমন পাকা ফল বা সবজি, রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট, ডাস্টবিন, সিঙ্ক বা শাওয়ার ড্রেন, ময়লার স্তুপ প্রভৃতি জায়গায় ডিম পাড়ে। মাছি পোকা দমনের জন্য বয়স্ক পোকা মেরে ফেলার পাশাপাশি ডিম পাড়ার স্থান নির্বাচন করতে হবে। ডিম পাড়া তথা বংশবিস্তার বন্ধ করতে পারলে মাছি পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করা সম্ভব। 

সবজিতে মাছি পোকার সংক্রমণ প্রতিহত করার ‍উপায়

মাছি পোকার আক্রমণ থেকে সবজি রক্ষা করার অসংখ্য কৌশল রয়েছে। তন্মাধ্যে কয়েকটি কৌশল আলোচনা করা হলো:-

১) সংগ্রহকৃত সবজি সংরক্ষণ: জমি থেকে খাওয়ার ‍উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করার সবজি রিফ্রেজারেটরে বা বায়ুরোধী কনটেইনারে সংরক্ষণ করতে হবে। এর ফলে মাছি পোকা বাহ্যিক স্তর ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করে ডিম পাড়তে পারবে না।

২) রান্নাঘর পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত রান্নাঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। বিশেষ করে মেঝে, সিঙ্ক, ক্যাবিনেট পরিষ্কার রাখতে হবে, জমাকৃত ময়লা নিয়মিত নির্ধারিত ডাস্টবিনে ফেলতে হবে।

৩) খাদ্যের উচ্ছিষ্ট: প্রতিনিয়ত খাদ্য গ্রহণের পর বিশাল পরিমাণ উচ্ছিষ্ট জমা হয়। এই সকল উচ্ছিষ্ট নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করে দুরবর্তী কোনো স্থানে গর্ত করে পুতে রাখলে মাছি পোকার ডিম পাড়ার প্রবণতা কমে যায়।

৪) ট্র্যাপের ব্যবহার: সবজি ক্ষেতে মাছি পোকা দমনের বড় প্রযুক্তি হলো ট্র্যাপের ব্যবহার। এটি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।মাছি পোকা প্রবণ এলাকায় ফসল উপযোগী ট্র্যাপ স্থাপন করে মাছি পোকা দমন করা যায়।

 ৫) আঠালো টেপের ব্যবহার: এটি একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি।মাছি পোকা প্রবণ এলাকায় ফসল উপযোগী আঠালো টেপ স্থাপন করে মাছি পোকা দমন করা যায়।

৬) প্রাকৃতিক শিকারী: মাছি পোকা প্রবণ এলাকায় শিকারী পোকার আধিক্য থাকলে মাছি পোকা দমন করা যায়। সবজি বাগানে লেডিবাগ বা বোলতা পোকার উপস্থিতি মাছি পোকা হ্রাস করে।

৭) মনিটরিং: নিয়মিত বাগান পরিদর্শন করতে হবে। বিশেষ করে কোনো ফল বা সবজি পরিপক্ক হলে দ্রুত সংগ্রহ করতে হবে এবং বাগানে পড়ে থাকা ফল বা সবজি দ্রুত স্থানান্তর করতে হবে।

৮) রাসায়নিক বালাইনাশক: সঠিক মাত্রায় সঠিক সময়ে সঠিক পদ্ধতিতে উপযুক্ত বালাইনাশক ব্যবহার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বালাইনাশক স্প্রে করার পর নির্দিষ্ট সময় পর ফসল সংগ্রহ করা হয়।

ফলের মাছি পোকা ধরবেন বা দমন করবেন কিভাবে?

সবজির পাশাপাশি ফলে মাছি পোকার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। নিম্নোক্ত উপায়ে ফলের মাছি পোকা ফাঁদে আটকানো ও দমন করা যায়।

১) ট্র্যাপের ব্যবহার: মাছি পোকা প্রবণ এলাকায় ট্র্যাপের মাধ্যমে দমন করা যায়। বাজারে বিভিন্ন প্রকার ট্র্যাপ কিনতে পাওয়া যায়। তবে একটি সরল প্রকৃতির ট্র্যাপ মাছি পোকা দমনের জন্য বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আপেল সিডার ভিনেগার, সাবান পানি এবং বাদামি চিনি দিয়ে সহজে ট্র্যাপ তৈরি করা যায়। এই তিনটি পদার্থকে একসাথে মিশ্রিত করে একটি পাত্রে মাছি পোকা প্রবণ এলাকায় রেখে দিলে পোকা এই দ্রবণের প্রতি আকৃষ্ট হয়। এরপর ফাঁদে আটকানো মাছি পোকা সহজে মেরে ফেলা যায়।  

২) আঠালো টেপ: ছোট ছোট আঠালো টেপ পাওয়া যায়। মাছি প্রবণ এলাকায় এই সকল টেপ দিয়ে রাখলে মাছি পোকা আঁটকে যায়। এরপর সহজে মাছি পাকা দমন করা সম্ভব।

৩) ভ্যাকুয়াম ক্লিনার: কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা যায়। কিছু কিছু কোম্পানি বিশেষ প্রকার ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রয় করে যা দিয়ে অধিক মাছি প্রবণ এলাকার মাছি আটকানো যায়। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভ্যাকুয়াম ক্লিনারে মাছি ধরা পড়া মাত্রই মুখ আটকে দিতে হবে যেন মাছি বের হয়ে যেতে না পারে।

৪) বাসায় তৈরি স্প্রে: মাছি  দমনের জন্য বাসায় খুব  সহজে নিরাপদ স্প্রে তৈরী করা যায়। সাবান পানি ও পেপারমিন্ট তেল দিয়ে তৈরিকৃত দ্রবণ স্প্রে করলে মাছি পোকা দুর হয়।

৫) কীটনাশকের ব্যবহার: আক্রমণের মাত্রা অধিক হলে সঠিক মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। সাইপারমেথ্রিন জাতীয় কীটনাশক ব্যবহার করে মাছি পোকা দমন করা হয়।  

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.