-->

জীববিজ্ঞান সিরিজঃ জীব কাকে বলে?

 জীববিজ্ঞান মানেই জীবের বিজ্ঞান। অর্থাৎ বিজ্ঞানের যে শাখা জীব নিয়ে আলোচনা করে তাই জীববিজ্ঞান। তাহলে জীব কী? মানে জীববিজ্ঞানে যে জীব নিয়ে আলোচনা করে তাদেরকে কিভাবে চিনব?

একটি সহজ প্রশ্ন দিয়ে শুরু করা যাক। কয়েকটি জীব ও জড়ের নাম বল। অনেকটা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাসের মতো। এই উত্তরটি নিশ্চয় খুব সহজ হবে। ঝটপট, উত্তর আসবে-মানুষ, গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগী, গাছ জীব। অন্যদিকে টেবিল, চেয়ার, নুড়িপাথর জড়। প্রশ্ন হলো এদেরকে আমরা জীব বলব কেন?

জীবের সংজ্ঞা কী? বা কোন কোন গুণাবলী থাকলে আমরা তাকে জীব বলতে পারি?

জীববিজ্ঞানের এটি একটি মৌলিক প্রশ্ন। কারণ জীবের সংজ্ঞা জানলে জীব চেনা যাবে, আর জীব চিনলে জীববিজ্ঞান সহজে বুঝা যাবে।

জীবের সংজ্ঞা নিয়ে মতপার্থক্যের শেষ নেই। বিজ্ঞানীদের তাদের গবেষণা ও দৃষ্টিভঙ্গি থেকে অসংখ্য সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। আমাদের উদ্দেশ্য হলো জীব কী তা জানা। সেই অর্থে কোন কোন বৈশিষ্ট্য থাকলে তাকে জীব বলা যাবে, এটি অধীকতর জরুরী। ঠিক কী কী গুণাগুণের ভিত্তিতে আমরা জীব বলতে পারি? জীববিজ্ঞানে জীবের এমন প্রধান সাতটি বৈশিষ্ট্য বা গুণের কথা বলা হয়েছে।

চিত্র: একটি জীব
বৈশিষ্ট্য -১: প্রজনন (Reproduction)

প্রজননের মাধ্যমে জীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে থাকে। জীবের অবশ্যই প্রজনন ক্ষমতা থাকতে হবে। জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো একটি জীব থেকে তার সন্তান সন্তনি জন্মলাভ করে। প্রজাতি ভেদে প্রজনন যৌন বা অযৌন হতে পারে। আমরা দেখতে পাই মানুষ,গরু, হাতি থেকে তার সন্তান সন্তনি উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে গাছের বীজ ও অঙ্গ থেকে নতুন নতুন চারা গাছ উৎপন্ন হয়। 

চিত্র: প্রজননক্ষম হাতি
 বৈশিষ্ট্য -২: বৃদ্ধি ক্ষমতা (Growth)

প্রতিটি জীবের বৃদ্ধি ঘটবে। তাদের আকার আকৃতি বাড়বে,  একটি স্থায়ী আকার লাভ করবে। আমরা জানি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে জীবের কোষের সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটবে। অন্যান্য জৈবিক প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে জীবের আকার বড় হবে, একটি পরিপূর্ণ আকৃতি পাবে। জীবের বৃদ্ধি ঘটে বলেই আমরা সদ্যভূমিষ্ট ছোট শিশু থেকে সময়ের ধারাবাহিকতায় কিশোর, তরুণ, যুবক, বয়োবৃদ্ধ মানুষ দেখতে পায়। একইভাবে একটি ছোট্ট চারা গাছ থেকে বিশাল আকারের গাছে পরিণত হয়।

চিত্র: সময়ের সাথে গাছের বৃদ্ধির ক্রম
বৈশিষ্ট্য-৩: পুষ্টি লাভ (Nutrition)

প্রতিটি জীব পুষ্টি গ্রহণ করবে। পুষ্টি গ্রহণের প্রথম ধাপ হলো খাদ্য গ্রহণ, এরপর জৈবিক ক্রিয়া খাদ্য থেকে বিভিন্ন পুষ্টি জীবদেহ গ্রহণ করবে। খাদ্য গ্রহণের ধারায় কোনো কোনো জীব নিজেই খাদ্য তৈরী করে। অন্যদিকে কিছু কিছু জীব অন্য জীব থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরী করে। অন্যদিকে প্রাণীকূল ‍উদ্ভিদ থেকে খাদ্যরূপে পুষ্টি লাভ করে।

চিত্র: পুষ্টি চক্র
বৈশিষ্ট্য ৪-চলন শক্তি (Movement)

প্রতিটি জীবের চলণ শক্তি আছে। জীব দেহের সকল অংশ বা কিছু অংশ গতিশীল হতে পারে। এর ফলে আমাদের হাতের মুঠো করা, হাটাচলা করা, ঘাড় বাঁকানো, আড়চোখে তাকানোর ক্ষমতা আছে। এমনটি গাছের চলণ ঘটে। অঙ্কুরোদগম থেকে শুরু করে প্রতি ধাপে গাছের চলন ঘটে। আধুনিক উদ্ভিদ বিজ্ঞান গাছের চলনের বিভিন্ন ধাপ ব্যাখ্যা করেছে।

চিত্র: বানরের চলন
বৈশিষ্ট্য- ৫: শ্বসন ক্ষমতা (Respiration)

প্রতিটি জীব শ্বসন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। শ্বসন হলো জীব দেহে শক্তি উৎপন্ন হওয়ার প্রক্রিয়া। প্রাণীদেহের একটি সুগঠিত শ্বসন তন্ত্র রয়েছে যার মাধ্যমে শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। অন্যদিকে উদ্ভিদ দেহে শ্বসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শর্করা ভেঙে শক্তি উৎপন্ন হয়।

চিত্র: উদ্ভিদের শ্বসন
বৈশিষ্ট্য- ৬: অনুভূতি ক্ষমতা (Sensitivity)

প্রতিটি জীব তার বাহ্যিক পরিবেশের প্রতি সাড়া প্রদান করে। এর ফলে মশা কামড় দিলে আমরা তা অনুভব করি এবং অতি দ্রুত মশা তাড়ানোর জন্য উদগ্রীব হয়। বিশেষ করে স্নায়ুতন্ত্র এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। পাশাপাশি বাইরের তাপ, চাপ, আলোর উপস্থিতি জীব অনুভব করতে পারে এবং প্রতিক্রিয়া প্রদান করে। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বাইরের স্পর্শে লজ্জাবতী গাছের কুঁকড়ে যাওয়া, মাংসাশী ‍উদ্ভিদের পাতায় কোনো কীটপতঙ্গ আশা মাত্রই পাতার ফাঁদ আটকে ফেলা অনুভূতি ক্ষমতার বড় উদাহরণ। এছাড়াত প্লান্ট নিউরোবায়োলজি আমাদের জানিয়েছে গাছ কিভাবে বাইরের তাপ, চাপ, শব্দ অনুভূতি অনুধাবন ও প্রতিক্রিয়া প্রদান করে।

চিত্র: সংবেদনশীল লজ্জাবতি গাছ
বৈশিষ্ট্য- ৭: রেচন প্রক্রিয়া (Excretion)

জীব রেচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জীব তার দেহ কোষ বর্জ্য পদার্থ নিঃসৃত করে। এটি জীবের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণীদেহ সুগঠিত রেচনতন্ত্র রয়েছে যার মাধ্যমে দেহ থেকে বর্জ্য পদার্থ নিঃসৃত হয়। এমনকি উদ্ভিদের শ্বসন প্রক্রিয়া শেষে নিঃসৃত কার্বন ডাই অক্সাইড রেচন পদার্থ যা বায়ুমন্ডলে নির্গত হয়।

চিত্র: মানুষের রেচনতন্ত্র

 

সম্পাদনা: রফিকুল ইসলাম, সহকারী অলিম্পিয়াড কোচ, বাংলাদেশ জীববিজ্ঞান অলিম্পিয়াড; অনূদিত বইঃ ক্যাম্পবেল বায়োলজি (প্রাণরসায়ন ইউনিট), বীজগণিত সমগ্র (১ম ও ২য় খন্ড)

 

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.