-->

বাড়িতেই তৈরী করুন শক্তিশালী জৈব বালাইনাশক “ঝলমল”

 ফসল ও কৃষি মানুষের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বেঁচে থাকার জন্য মানুষের চাই খাবার। আর খাবার সরবরাহের অন্যরকম মাধ্যম ফসল উৎপাদন। আমাদের দেশসহ বিশ্বের সকল দেশে খাদ্য যোগান দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম ফসল আবাদ করা হয়। প্রতিনিয়ত জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় আবাদি জমি হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য উৎপাদনে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হচ্ছে। একদিকে উচ্চফলনশীল বিভিন্ন ফসলের জাত, অন্যদিকে কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগের মাধ্যমে বিপুল জনসংখ্যার খাবার যোগান দেওয়ার প্রতিনিয়ত চেষ্টা চলছে। এর ফলে নতুন নতুন উফশী ,হাইব্রিড জাত আবাদের পরিমাণ বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে বিপুল হারে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার। সময়ের পরিক্রমায় খাদ্যের চাহিদা মেটাতে আমাদেরকে এসব নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হচ্ছে। তবে একইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পরিবেশ, জলবায়ু ও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। বিশেষ করে অধিক হারে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে, ক্ষতিকার পোকামাকড়ের পাশাপাশি ব্যাপকহারে উপকারী পোকামাকড় হ্রাস পাচ্ছে। সেই সাথে এসব রাসায়নিক সার-কীটনাশকের বিভিন্ন উপাদান মাটি ও ফসলে থেকে যাচ্ছে। যা পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।

একদিকে খাদ্য চাহিদা ,অন্যদিকে পরিবেশ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে আমাদেরকে টেকসই কৃষির দিকে অগ্রসর হতে হবে। পরিমিত মাত্রায় রাসায়নিক সার ব্যবহারের পাশাপাশি জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে রোগ পোকামাকড় দমনে আইপিএম পদ্ধতির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। বালাই নিধনে জৈব প্রযুক্তির ব্যবহার ঘটাতে হবে, জৈব বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হবে। চূড়ান্ত অবস্থায় সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় রাসায়নিক বালাইনাশক নিয়ে ভাবতে হবে। নিরাপদ ফসল উৎপাদনে জৈব সার, জৈব বালাইনাশকের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইতিমধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকহারে জৈব বালাইনাশক নির্ভর চাষাবাদ হচ্ছে। বাংলাদেশেও সম্প্রতি জৈব সার হিসেবে ভার্মিকম্পোস্ট, ট্রাইকোকম্পোস্ট ব্যবহার হচ্ছে, বাড়িতে বিভিন্ন উপাদান দিয়ে জৈব বালাইনাশক তৈরী করা হচ্ছে। আজকে আমরা এমন একটি জৈব কৃষি উপকরণ নিয়ে আলোচনা করব যা একসাথে জৈব সার ও বালাইনাশক হিসেবে কাজ করবে। মূলত এটি নেপালের পাহাড়ী অঞ্চলে ব্যাপক আকারে ব্যবহৃত হচ্ছে। নেপালের ‍কৃষি বিজ্ঞানীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এটি একটি জনপ্রিয় প্রযুক্তি। আমরা আমাদের আলোচনায় এই জৈব উপাদানের প্রস্তুত প্রণালি ও ব্যবহার বিধি শিখব। নেপালে এটিকে “ঝলমল” নাম দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের প্রস্তুত প্রণালী অনুসরণ করে কিভাবে আমরা আমাদের বাড়িতে তৈরী করতে পারি তা জানব।

ঝলমল কী?

ঝলমল হলো বাড়িতে প্রস্তুতকৃত জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক। এটি একদিকে মাটির উর্বরতা বাড়ায়, গাছকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে। অন্যদিকে এটি ফসলের রোগ পোকামাকড় দমন করে। এটি কৃষকের বাড়িতে সহজে প্রস্তুত করা যায়। নিজ বাড়িতে পাওয়া যায় এমন উপাদান যেমন পানি, গবাদী পশুর (গরু, মহিষ) মূত্র ও গোবর, উপকারী অনুজীব এবং বিভিন্ন সবুজ উদ্ভিদ একত্রে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে ঝলমল তৈরী করা হয়। এসব উপাদানগুলো নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে ঝলমল তৈরী করা হয়। নেপালে ফসল উৎপাদনে যে ঝলমল ব্যবহার করা হয় তা তিন প্রকার:-

১) ঝলমল-১: গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করবে।

২) ঝলমল -২ ও ঝলমল-৩: গাছের পুষ্টি উপাদান সরবরাহের পাশাপাশি রোগ-পোকামাকড় দমন করবে। বিশেষ করে ছত্রাকজাতীয় রোগ ও ভাইরাস রোগের বাহককে দমন করে।

ঝলমল তৈরীতে ব্যবহৃত উপাদনমূহ

ঝলমল তৈরীতে সহজে প্রাপ্য উপাদান ব্যবহার করা হয়। এর উদ্দেশ্য হলো যেন কৃষক খুব সহজে কম খরচে তার নিজ বাড়িতে এটি প্রস্তুত করতে পারে। ঝলমল তৈরীতে যে সকল উপাদান ব্যবহার করা হয় তা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

১) গবাদি পশুর (গরু ও মহিষ) মূত্র ও গোবর: আমরা জানি গরু বা মহিষের মূত্র শক্তিশালী জৈব সার ও বালাইনাশক। এটি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম এবং ফসফেট ধারণ করে। এছাড়াও গরু  ও মহিষের মূত্রে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, এন্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্থেলমিন্থিক, অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিফাঙ্গাল গুণাগুণ আছে। একটি গরু বা মহিষ দিনে গড়ে ১০-১৫ কেজি গোবর ও ৬-৯ লিটার মূত্র নিঃসরণ করে। গোবর সাধারণত জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে মূত্র জৈব তরল সার ও বালাইনাশক হিসেবে অন্য উপাদানের সাথে মিশ্রিত অবস্থায় ব্যবহার করা যায়।

২) অনুজীব উপাদানঃ ঝলমল তৈরীতে অনুজীব উপাদান ব্যবহৃত হয়। এটি মিশ্রিত উপাদানের গাঁজন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। ঝলমলে বিভিন্ন প্রকার অনুজীব ব্যবহার করা যেতে পারে। নেপালি বিজ্ঞানীরা ‘জিভাতু’ নামক এক প্রকার অনুজীব উপাদান তৈরী করেছেন যা ঝলমল তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। জিভাতু বিভিন্ন প্রকার সক্রিয় অনুজীব যেমন ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া, অ্যাজোটোব্যাকটোরের বিভিন্ন প্রজাতি, ট্রাইকোডার্মার বিভিন্ন প্রজাতি, ফসফেট ও পটাশিয়ামকে দ্রবীভূতকারী ব্যাকটেরিয়ার সমন্বয়ে গঠিত হয়। তবে আপনার বাড়িতে ঝলমল তৈরী করতে জিভাতু থাকতে হবে এমন নয়। এর পরিবর্তে অন্যান্য যে কোনো সক্রিয় অনুজীব ‍উপাদান যেমন অ্যাকটিনোমাইসটিস বা ট্রাইকোডার্মা ব্যবহার করতে পারেন।

৩) খামারজাত জৈব সার: খামারে তৈরী করা বিভিন্ন প্রকার জৈব সার (কম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট, ট্রাইকোকম্পোস্ট প্রভৃতি) যেখানে মাইক্রো ও ম্যাক্রো পুষ্টি উপাদান থাকে। খুব সহজে বাড়িতে খড়, শাক-সবজি-ফলে উচ্চিষ্ট অংশ, সবুজ উদ্ভিদ যেমন কচুরিপানা দিয়ে সহজে তৈরী করা যায়।

৪) বালাইনাশক গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ: প্রৃকতিতে কিছু ‍উদ্ভিদ আছে (যেমন, পেঁপে, গাঁদা ফুল, নিম ইত্যাদি) যাদের বালাইনাশক গুণ আছে। এসকল উদ্ভিদের রস সরাসরি প্রয়োগ করে বিভিন্ন রোগ পোকামাকড় কিছুটা হলেও দমন করা যায়। তিতা, ঝাঁঝালো স্বাদযুক্ত এসকল উদ্ভিদের অংশ ঝলমল তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। এমন কিছু উদ্ভিদের সংক্ষিপ্ত তালিকা দেওয়া হলো:

বৈজ্ঞানিক নাম

সাধারণ নাম (ইংরেজী)

স্থানীয় নাম (বাংলা)

ব্যবহৃত অংশ

Artemisia vulgaris

Mugwort

আর্টেমেশিয়া

পাতা ও কান্ড

Justicia adhatoda

Malabur nut

বাসক ফুল

পাতা

Urtica dioica

Stinging nettle

বিছুটি গাছ

পাতা ও কান্ড

Melia azedarach

Persian lilac

ঘোড়া নিম

পাতা ও  ফল

Azadiracha indica

Indian lilac

নিম

পাতা ও কান্ড

Agave americana

Century plant

সেঞ্চুরি প্লান্ট

পাতা ও কান্ড

Chromolaena odorata

Siam weed

শিয়াল মুতি

পাতা ও কান্ড

Lantana camara

Wild sage

লান্টানা

পাতা ও ফুল

Prunus persica

Peach

পীচ ফল

পাতা

Tagetes patula

Marigold

গাঁদা

পাতা ও কান্ড

Zingiber officinale

Ginger

আদা

ভুগর্ভস্থ রাইজোম

Curcuma longa

Turmeric

হলুদ

ভুগর্ভস্থ রাইজোম

Allium cepa

Onion

পিঁয়াজ

বাল্ব

Capsicum annum

Chilli

মরিচ

ফল

Allium sativum

Garlic

রসুন

বাল্ব

Carica papaya

Papaya

পেঁপে

পাতা

 

ঝলমল কীভাবে তৈরী করবেন?

সাধারণত উল্লেখিত উপাদান নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত করে কয়েকদিন রেখে দিলে জৈব উপাদান ‘ঝলমল’ তৈরী হয়ে যাবে। তবে ঝলমল তৈরীতে তিনটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণঃ নির্দিষ্ট অনুপাতের মিশ্রণ, সময় ও তাপমাত্রা। ঝলমল-১, ২ ও ৩ এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন অনুপাতে উপাদান মিশ্রিত করতে হবে। মিশ্রিত উপাদান প্রতিটির ক্ষেত্রে নির্দষ্ট সময় অবধি রেখে দিলে তা ব্যবহার উপযোগী হবে। অন্যদিকে তাপমাত্রা ভেদে ঝলমল তৈরীর হওয়ার সময় কমবেশি হবে। সাধারণত ১৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঝলমল-১ ও ঝলমল-২ তৈরীতে ১৫ দিন এবং ঝলমল-৩ তৈরীতে ২১-৩০ দিন সময় লাগে। তাপমাত্রা বেশি হলে সময় কম লাগে। অন্যদিকে তাপমাত্রা হ্রাস পেলে ঝলমল তৈরী হতে ৫-৭ দিন সময় বেশি লাগে। প্রয়োজনীয় উপাদানের পরিমাণ ঝলমল তৈরীর পরিমাণ ভেদে কমবেশি হবে। নিচে ৫০ লিটার পাত্রকে মানদন্ড ধরে ঝলমল তৈরীর প্রক্রিয়া সচিত্র আলোচনা করা হলোঃ-

ঝলমল-১ প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি ৫০ লিটার পাত্রে নিম্নোক্ত ধাপ অনুসরণ করে ঝলমল-১ তৈরী করতে হবে।


১) প্রথমে ৫০ লিটারের একটি বায়ুনিরোধ পাত্র (প্লাস্টিকের ড্রাম, সিমেন্টের কনটেইনার ইত্যাদি) নিতে হবে।

২) এরপর ১৭ কিলোগ্রাম গোবর বা খামারজাত জৈব সার পাত্রে নিতে হবে।

৩) এরপর ১৬ লিটার গরু বা মহিষের মূত্র নিতে হবে।

৪) ১৬ লিটার পানি দিতে হবে।

৫) ১ লিটার অণুজীব উপাদান (জিভাতু বা ট্রাইকোডার্মা) দিতে হবে।

৬) ভালোভাবে মিশ্রণ করে স্বাভাবিক পরিবেশে রেখে দিতে হবে।

৭) ৩ দিন অন্তর অন্তর ভালোভাবে নাড়িয়ে দিতে হবে।

৮) ১৫-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এভাবে রাখলে ১৫ দিন পর ঝলমল-১ প্রস্তুত হয়ে যাবে।

মিশ্রণে মূত্রের গন্ধ না পাওয়া গেলে এবং মিশ্রণের উপরের স্তরে সবুজ রঙের আভা দেখা দিলে বুঝতে হবে ঝলমল-১ প্রস্তুত হয়ে গেছে। এরপর তৈরীকৃত মিশ্রণ ফসলে প্রয়োগ করা যাবে। উৎপন্ন তরল ঝলমল-১ ছাঁকার প্রয়োজন নেই।

ঝলমল-২ প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি ৫০ লিটার পাত্রে নিম্নোক্ত ধাপ অনুসরণ করে ঝলমল-২ তৈরী করতে হবে।

১) প্রথমে ৫০ লিটারের একটি বায়ুনিরোধ পাত্র (প্লাস্টিকের ড্রাম, সিমেন্টের কনটেইনার ইত্যাদি) নিতে হবে।

২) এরপর ২৪.৫ লিটার গরু বা মহিষের মূত্র নিতে হবে।

৩) ২৪.৫ লিটার পানি দিতে হবে।

৪) ১ লিটার অণুজীব উপাদান (জিভাতু বা ট্রাইকোডার্মা) দিতে হবে।

৫) ভালোভাবে মিশ্রণ করে স্বাভাবিক পরিবেশে রেখে দিতে হবে।

৬) ৩ দিন অন্তর অন্তর ভালোভাবে নাড়িয়ে দিতে হবে।

৭) ১৫-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এভাবে রাখলে ১৫ দিন পর ঝলমল-১ প্রস্তুত হয়ে যাবে।

মিশ্রণে মূত্রের গন্ধ না পাওয়া গেলে এবং মিশ্রণের উপরের স্তরে সবুজ রঙের আভা দেখা দিলে বুঝতে হবে ঝলমল-২ প্রস্তুত হয়ে গেছে। এরপর তৈরীকৃত মিশ্রণ ফসলে প্রয়োগ করা যাবে। উৎপন্ন তরল ঝলমল-২ ছাঁকার প্রয়োজন নেই।

ঝলমল-৩ প্রস্তুত প্রণালীঃ একটি ৫০ লিটার পাত্রে নিম্নোক্ত ধাপ অনুসরণ করে ঝলমল-৩ তৈরী করতে হবে।


১) প্রথমে ৫০ লিটারের একটি বায়ুনিরোধ পাত্র (প্লাস্টিকের ড্রাম, সিমেন্টের কনটেইনার ইত্যাদি) নিতে হবে।

২) এরপর ১০ কিলোগ্রাম সবুজ উদ্ভিদের পাতা, কান্ড বা শাক-সবজির উচ্ছিষ্ট অংশ নিতে হবে।

৩) এরপর ২০ লিটার গরু বা মহিষের মূত্র নিতে হবে।

 ৪) ২০ লিটার পানি দিতে হবে।

৪) ১ লিটার অণুজীব উপাদান (জিভাতু বা ট্রাইকোডার্মা) দিতে হবে।

৫) ভালোভাবে মিশ্রণ করে স্বাভাবিক পরিবেশে রেখে দিতে হবে।

৬) ৩ দিন অন্তর অন্তর ভালোভাবে নাড়িয়ে দিতে হবে।

৭) ১৫-৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এভাবে রাখলে ২১-৩০ দিন পর ঝলমল-৩ প্রস্তুত হয়ে যাবে।

গাঁড় ও ঝাঁঝালো পঁচা গন্ধ অনুভূত হলে বুঝতে হবে ঝলমল-৩ প্রস্তুত হয়ে গেছে। এরপর তৈরীকৃত মিশ্রণ ফসলে প্রয়োগ করা যাবে। উৎপন্ন তরল ঝলমল-৩ ছাঁকার প্রয়োজন নেই।

ফসলে ঝলমল প্রয়োগ বিধি

ঝলমল একটি শক্তিশালী জৈব সার এবং জৈব বালাইনাশক। ফলে ফসলে ঝলমল ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। নির্দেশিত ডোজের পাশাপাশি ফসলে স্প্রে করার সময় কৃষক অবশ্যই হ্যান্ড গ্লোভস, মাস্ক, রাবারের জুতা পরিধান করবে। সাধারণ উৎপন্ন ঝলমল পানির সাথে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশ্রিত করে প্রয়োগ করা হয়। নিচে ঝলমল-১, ২ ও ৩ এর প্রয়োগ বিধি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:-

ক) ঝলমল-১ প্রয়োগ বিধি: ঝলমল -১ সাধারণত গাছের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ম্যাক্রো ও মাইক্রো পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে।

ঝলমল-১ এর পরিমাণঃ  

১:৩ অনুপাত মিশ্রণের (১ লিটার ঝলমল-১ এর সাথে ৩ লিটার পানির মিশ্রণ) ক্ষেত্রে:  

৫০০ বর্গমিটার জমিতে  ১২ লিটার ঝলমল-১ প্রয়োগ করতে হবে।

১:৫ অনুপাত মিশ্রণের (১ লিটার ঝলমল-১ এর সাথে ৫ লিটার পানির মিশ্রণ) ক্ষেত্রে:  

৫০০ বর্গমিটার জমিতে  ৮ লিটার ঝলমল-১ প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগের নিয়ম: সরাসরি গাছের চারপাশের মাটিতে প্রয়োগ করা যায়। তবে রিং পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা শ্রেয়। গাছ থেকে ১৫ সে.মি. দুরে গাছে চারদিকে রিং আকারে গর্ত করে তাতে ঝলমল-১ ও পানির মিশ্রণ দিতে হবে। দু-সপ্তাহ অন্তর অন্তর প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।

খ) ঝলমল-২ প্রয়োগ বিধি: ঝলমল -২ সাধারণত ফসলের রোগ-পোকামাকড় দমনে প্রয়োগ করা হয়।  

ঝলমল-২ এর পরিমাণঃ  

১:৩ অনুপাত মিশ্রণের (১ লিটার ঝলমল-২ এর সাথে ৩ লিটার পানির মিশ্রণ) ক্ষেত্রে:  

১) গাছের বয়স ৩০-৬০ দিন হলে ৫০০ বর্গমিটার জমিতে  ৮ লিটার ঝলমল-২ প্রয়োগ করতে হবে।

২) গাছের বয়স ৬০ দিনের বেশি হলে ৫০০ বর্গমিটার জমির জমিতে ১২ লিটার ঝলমল-২ প্রয়োগ করতে হবে।

১:৫ অনুপাত মিশ্রণের (১ লিটার ঝলমল-২ এর সাথে ৫ লিটার পানির মিশ্রণ) ক্ষেত্রে:  

১) গাছের বয়স ৩০ দিন পর্যন্ত হলে ৫০০ বর্গমিটার জমিতে  ৪ লিটার ঝলমল-২ প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ সতর্কতার সাথে গাছের কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও পাতার উভয় পাশে স্প্রে করতে হবে। রোগ-পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাবের মাত্রা ভেদে প্রতি  সপ্তাহে একবার বা দু্ইবার স্প্রে করতে হবে।

গ) ঝলমল-৩ প্রয়োগ বিধি: ঝলমল -৩ সাধারণত ফসলের রোগ-পোকামাকড় দমনে প্রয়োগ করা হয়।  

ঝলমল-৩ এর পরিমাণঃ  

১:৩ অনুপাত মিশ্রণের (১ লিটার ঝলমল-৩ এর সাথে ৩ লিটার পানির মিশ্রণ) ক্ষেত্রে:  

১) গাছের বয়স ৩০-৬০ দিন হলে ৫০০ বর্গমিটার জমিতে  ৮ লিটার ঝলমল-৩ প্রয়োগ করতে হবে।

২) গাছের বয়স ৬০ দিনের বেশি হলে ৫০০ বর্গমিটার জমির জমিতে ১২ লিটার ঝলমল-৩ প্রয়োগ করতে হবে।

১:৫ অনুপাত মিশ্রণের (১ লিটার ঝলমল-৩ এর সাথে ৫ লিটার পানির মিশ্রণ) ক্ষেত্রে:  

১) গাছের বয়স ৩০ দিন পর্যন্ত হলে ৫০০ বর্গমিটার জমিতে  ৪ লিটার ঝলমল-৩ প্রয়োগ করতে হবে।

প্রয়োগ পদ্ধতিঃ সতর্কতার সাথে গাছের কান্ড, শাখা-প্রশাখা ও পাতার উভয় পাশে স্প্রে করতে হবে। দুই মাস পর্যন্ত বা রোগ-পোকামাকড় দেখা দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সপ্তাহে একবার প্রয়োগ করতে হবে। রোগ-পোকামাকড়ের প্রাদুর্ভাবের মাত্রা বেশি হলে সপ্তাহে দু্ইবার স্প্রে করতে হবে।


সংকলনঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম, লেখক ও বিজ্ঞানকর্মী

সূত্র: ICIMOD ও CEAPRED

Blogger দ্বারা পরিচালিত.