বিজ্ঞানের চোখে আনন্দের ভাষা
আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে! কোনো পছন্দের জায়গায় ঘুরতে গেলে বা সুখের মুহুর্ত আসলে যেন অজান্তেই মন এমন সুর তোলে। সত্যিই জীবনের সাথে আনন্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের সুখের মুহূর্তে যেমন আমরা আনন্দিত হয় তেমনি শরীরের মধ্যে অন্যরকম অনুভূতি জাগে। তাহলে কি আনন্দের সাথে শরীরের কোনো রাসায়নিক ক্রিয়া জড়িত? জীব হিসেবে মানুষের আনন্দ অনুভূতির সাথে জৈবরাসায়নিক ক্রিয়া জড়িত। বিজ্ঞানীদের মতে মানব শরীরে এমন কিছু রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যাদের ক্রিয়ার ফলে মানুষ আনন্দ পায়, সুখানুভূতি লাভ করে। তার মানে এই নয় যে সুখের জন্য একমাত্র এসব রাসায়নিক উপাদান দায়ী। সুখের বিভিন্ন বিষয় জড়িত। কোনো ব্যক্তির পারিপাশ্বিক অবস্থা অবস্থা, চিন্তা শক্তি, সংসার জীবন, কর্মজীবন প্রভৃতির সমন্বয়ে সুখ জড়িত। তবে এক্ষেত্রে তার শরীরবৃত্তিয় যে পরিবর্তন ঘটে তার সাথে কিছু জৈব উপাদান জড়িত। এসকল রাসায়নিক উপাদান বা নিউরোট্রান্সমিটার আমাদের মষ্তিষ্ক ও শরীরকে প্রভাবিত করে আমাদের সুখের অনুভূতি দেয়। মানব দেহে সুখের অনুভূতির সাথে জড়িত এমন কয়েকটি উপাদান হলো –সোরোটোনিন, ডোপামিন, অক্সিটোসিন ও এনডরফিন। আমাদের মষ্তিষ্ক ও অন্ত্রে সোরোটোনিন উৎপন্ন হয়ে রক্তের মাধ্যমে প্রবাহিত হয় এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সত্যিকারার্থে কোন উপাদান কাউকে সুখী করে তা এখনো আমাদের কাছে ধাঁধাঁ, তবে বিজ্ঞানীরা সেরোটোনিনকে ‘সুখের রাসায়নিক উপাদান’ বলে থাকেন। কারণ দেহে সেরেটোনিনের মাত্রা বেশি হলে মানুষ অধিক সুখানুভূতি লাভ করে, আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। ডোপামিন মষ্তিষ্কে উৎপন্ন হয়ে দেহের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি শরীরের বিভিন্ন জৈব ক্রিয়া যেমন রক্ত প্রবাহ, যকৃতের ক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। সাধারণত কেউ সাফল্য লাভ করলে শরীরের ডোপামিন নিঃসৃত হয়। ফলে রক্তের সাথে ডোপামিন প্রবাহিত হয়ে মষ্তিষ্কে সুখের অনুভূতি সৃষ্টি করে। তাই ডোপামিন ‘পুরষ্কার অণু’ নামে পরিচিত। যখন মা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে নেয় বা আমরা প্রিয়জনকে বুকে জড়িয়ে ধরি বা বন্ধুর সাথে করমর্দন করি তখন অন্য রকম ভালো লাগার তৈরী হয়। এমন অনুভূতির জন্য অক্সিটোসিন ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এটি গভীর বন্ধুত্ব, আত্ববিশ্বাস, ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরীতে সহায়তা করে। অন্যদিকে শরীরের ব্যাথা দূর করার পাশাপাশি এনডোরফিন আনন্দ অনুভূতির সুষ্টি করে।