-->

সহজে তৈরী করুন জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার


ছবি: জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার
কৃষকের উৎপাদিত ফসল জিরো এনার্জি কুল চেম্বারে দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করা যায়। এই পদ্ধতিতে বিশেষভাবে তৈরীকৃত একটি চেম্বারে দীর্ঘক্ষণ ফল, সবজি সতেজ রাখা যায়। ফলে কৃষক তার জমি থেকে সবজি বা ফল সংগ্রহ করে সতেজ রেখে পরবর্তীতে ভালো মূল্যে বিক্রয় করতে পারেন। আমরা জানি বাষ্পীভবনের ফলে কোনো একটি মাধ্যমের তাপমাত্রা হ্রাস পায়, ফলে ঠান্ডা হয়। বাষ্পীভবনের ধারণা কাজে লাগিয়ে স্বল্প খরচে কৃষকের বাড়িতে বা ফসলের ক্ষেতের পাশে কুলিং চেম্বার তৈরী করা হয়। মূলত আশির দশকে ভারতে এই প্রযুক্তির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সবজি ও ফল সংরক্ষণে জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার ব্যবহার করা হচ্ছে। মূলত জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার হলো ইট ও বালি দিয়ে তৈরী করা একটি চেম্বার যেখানে কৃষক ফল, সবজি সংরক্ষণ করতে পারে। চেম্বারের মধ্যে তাপমাত্রা কম থাকায় সবজি বা ফল সতেজ থাকে, সেল্ফ লাইফ বেড়ে যায়। ফলে সবজি বা ফলনের পঁচনের হার কমে যায়, কৃষক ভালো মূল্য পায়।

কুলিং চেম্বারের আকারঃ জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারের বাইরের দৈর্ঘ্য ২.১৫ মিটার এবং প্রস্থ ১.৫ মিটার। ইটের দুইটি দেয়াল বাদে ভিতরের দৈর্ঘ্য ১.৪০ মিটার এবং প্রস্থ ০.৭ মিটার।

কুলিং চেম্বারের ধারণ ক্ষমতাঃ একটি জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারে ৬ টি প্লাস্টিকের ক্র্যাট রাখা যায়। গড়ে একটি জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারে ১২০ কেজি সবজি সংরক্ষণ করার সুযোগ রয়েছে।

কুলিং চেম্বার তৈরীতে প্রয়োজনীয় উপকরণ

১) ৮০০ থেকে ১০০০ টি ইট। ভালো মানের অখন্ড ইট হতে হবে। ২) ৪ ঘনমিটার বালি

৩)  অন্যান্য উপকরণঃ ঝুড়ি, কোদাল, শাবল, পানির পাত্র বা ঝাঁঝড়ি, ফিতা টেপ ইত্যাদি

জায়গা নির্ধারণ

১) কুলিং চেম্বারের জন্য সমতল, ছায়াযুক্ত স্থান নির্ধারণ করতে হবে। পানির উৎসের কাছাকাছি জায়গা নির্ধারণ করতে হবে।

২) কোদাল দিয়ে জায়গা সমান করতে হবে, ময়লা, আবর্জনা বা আগাছা দুর করতে হবে।

৩) সমান করে বালি বিছায়ে দিন, শক্ত করুন অথবা বালির স্তরের উপর একটি করে ইট বিছায়ে সমতল করুন। তবে বালি বিছিয়ে তা মুগুর দিয়ে শক্ত করে সমতল করলে পানি নিষ্কাশনের জন্য ভালো হয়।

 মেঝে নির্মাণ

১) প্রথমে ফিতা দিয়ে দৈর্ঘ্য প্রস্থ বরাবর জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারের মাপ নেই।

২) অথবা, মেঝেতে পাশাপাশি চার আঙ্গুল দুরে দুরে তিনটি প্লাস্টিকের ক্র্যাট রাখুন। ক্র্যাটের চারকোনাকে সীমা ধরে ভিতরের দেয়ালের জন্য মাপ নির্ধারণ করুন। যদি ফিতা না থাকে তাহলে এই পদ্ধতিতে মাপ নেওয়া শ্রেয়। 

ছবি: কুলিং চেম্বারের মাপ নেওয়া ও মেঝে নির্মাণ
 দেয়াল নির্মাণ

১) প্রথমে ভিতরের দেয়াল তৈরী করুন। কুলিং চেম্বারের ভিতরে বসানো প্লাস্টিক ক্র্যাট থেকে চার আঙ্গুল (৭-৮ সে.মি.) দুরে ভিতরের দেয়াল তৈরী করতে হবে। তাহলে মেঝে নির্মাণের দ্বিতীয় পদ্ধতিতে পরপর তিনটি প্লাস্টিক ক্র্যাট বসিয়ে একটি পাটকাঠি দিয়ে ক্র্যাটের কোনা থেকে চারদিকে দাগ দিন যা ক্র্যাটের দখলকৃত জায়গা বুঝাবে। 

ছবি: মেঝে ও ভিতরের দেয়াল তৈরী

 

২) এরপর ক্র্যাটের সীমানা থেকে চার আঙ্গুল দুরে ভিতরের দেয়াল তৈরী করুন। লম্বালম্বি একটির পর একটি সাজিয়ে (বিল্ডিং তৈরীর করার সময় যেভাবে ইট বসায়) মোটামুটি একটির উপর আরেকটি রাখা প্লাস্টিক ক্র্যাটের উচ্চতার সমান উচ্চতার দেয়াল তৈরী করুন। ইটের মাঝে সিমেন্ট দিয়ে আটকানোর প্রয়োজন নয়। শুধু ইট সাজিয়ে রাখুন। অবশ্যই প্রথমে ইট পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিন।

৩) ভিতরের দেয়াল তৈরী হয়ে গেলে চার আঙ্গুল (৭-৮ সে.মি.) জায়গা ফাঁকা রেখে একই পদ্ধতিতে বাইরের দেয়াল তৈরী করুন।

৪) ভিতর ও বাইরের দেয়াল তৈরীর পরা দুই দেয়ালের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গায় বালি দিয়ে ভরাট করুন। বালির উপর পানি দিলে বালি ঠিকঠাক বসে যাবে। তাই বালি দেয়ার পর পানি দিন, বালির স্তর নিঁচু হয়ে গেলে পুনরায় বালি দিয়ে ভরাট করে বাইরের দেয়ালের উচ্চতার কাছাকাছি উচ্চতার সমান করুন। 

ছবি: দুই দেয়ালের মাঝে বালি দেওয়া
৫) ভিতরের দেয়াল অপেক্ষা বাইরের দেয়ালে একটি ইটের সমান বেশি উঁচু করুন। অর্থাৎ ভিতরের দেয়াল বাইরের দেয়াল অপেক্ষা এক ইটের উচ্চতার সমান বেশি উঁচু হবে।

৬) চেম্বারের উপরে একটি মোটা চটের বস্তা বা বাঁশের চালা দিয়ে ঢেকে দিন। বাজার থেকে ম্যাট কিনে ঢেকে দিতে পারেন। এককথায় সহজে সরানো যায় এমন আবরণ ব্যবহার করুন। এক্ষেত্রে বাঁশের চাটাই বা নারিকেল পাতা বা সুপারি পাতার চালা ব্যবহার করা যেতে পারে।

৭) রোদ বৃষ্টি থেকে কুলিং চেম্বার রক্ষার জন্য চার কোনায় চারটি খুটির উপর দোচালা ঘর তৈরী করুন। এতে কুলিং চেম্বার দীর্ঘদিন টিকে থাকবে। কুলিং চেম্বার ঠান্ডা রাখতে টিনের চালা না দিয়ে কলার পাতা বা নারিকেল বা সুপারির পাতার চালা তৈরী করা ভালো। 

ছবি: কুলিং চেম্বারের উপর ছাউনি
 কুলিং চেম্বারে সবজি বা ফল রাখার উপায়

১) ছয়টি প্লাস্টিক ক্যারেটের প্রতিটিতিতে সবজি বা ফল রাখুন।

২) প্রথমে পাশাপাশি চার আঙ্গুল ফাঁকা রেখে তিনটি প্লাস্টিক ক্যারেট কুলিং চেম্বারের মেঝেতে রাখুন।

 ৩) এবার প্রথমে রাখা ক্যারেটের ‍প্রতিটির উপর একটি করে প্লাস্টিক ক্যারেট রাখুন। ৪) ক্যারেট রাখা শেষে ক্যারেটের উপরের খোলা মুখের উপর একটি চটের বস্তা বিছিয়ে দিন।

 ৫) এরপর চেম্বারের উপর পূর্বে তৈরী করা বাঁশের বা কলাপাতা বা নারিকেল পাতার চাটাই দিয়ে ঢেকে দিন।

ছবি: কুলিং চেম্বারে সবজি রাখা
জিরো এনার্জি কুল চেম্বারের উপকারিতা

জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার ১০-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা কমাতে পারে। তবে উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতা বজায় রাখে। ফলে খুব সহজে সবজি, ফল সংরক্ষণ করে রাখা যায়। বর্তমানে সবজি বা ফল ব্যবসায়ীরা জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার ব্যবহার করেন। নিচের সারণীতে বিভিন্ন সবজির ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পরিবেশ ও জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বারে ওজন হ্রাস ও শেল্ফ লাইফের তুলনামূলক চিত্র দেখানো হলো-


সবজি

ওজন হ্রাস (%)

শেল্ফ লাইফ (দিন)

 

জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার

স্বাভাবিক পরিবেশ

জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার

স্বাভাবিক পরিবেশ

মরিচ

২-৩

১৪-১৮

টমেটো

১-৭

৫-২৩

১২-১৫

৭-৯

বেগুন

শসা

১০

ফুলকপি

১০

 জিরো এনার্জি কুলিং চেম্বার সহজে তৈরীর করতে নিচের ভিডিওটি সহায়ক হতে পারে

 

সূত্রঃ ওয়ার্ল্ড ভেজিটেবল সেন্টার, ইউএসএআইডি

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.