প্যারেনকাইমা কোষ
প্যারেনকাইমা কোষে প্রাথমিক পর্দা থাকে। এটি বেশ পাতলা ও ভঙ্গুর। প্যারেনকাইমা কোষে সেকেন্ডারি পর্দা অনুপস্থিত। পূর্ণবয়স্ক প্যারেনকাইমা কোষে বড় কেন্দ্রীয় গহ্বর বিদ্যমান। প্যারেনকাইমা কোষ উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজ সম্পন্ন করে। এটি উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন জৈব পদার্থ সংশ্লেষ ও সঞ্চয় করে থাকে। উদাহরণ হিসেবে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। খাদ্য উতপাদন ক্রিয়া হিসেবে সালোকসংশ্লেষণ উদ্ভিদ দেহের একটি প্রয়োজনীয় জৈবিক ক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ মূলের মাধ্যমে গৃহীত পানি ও পুষ্টি উপাদানের উপস্থিতিতে সূর্যালোক ব্যবহার করে শর্করা তৈরী করে। এই ক্রিয়া পাতার ক্লোরোপ্লাস্টে সংঘটিত হয়। ক্লোরোপ্লাস্ট প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত। ক্লোরোফিল নামক বিশেষ পদার্থের উপস্থিতির কারণে ক্লোরোপ্লাস্টের রং সবুজ। অধিকাংশ পাতার রং সবুজ কেন? তুমি জেনে অবাক হবে এ সকল উদ্ভিদের পাতায় ক্লোরোফিলের আধিক্যের কারণে সবুজ বর্ণ। বিষয়টি এমন নয় যে সকল গাছের পাতা সবুজ হবে। অনেক উদ্ভিদ আছে যাদের পাতার রং লাল বা হলুদ। তোমার বাসার পাশে পাতাবাহার গাছ দেখলে এই ধারণা স্পষ্ট হবে। এর কারণ কি? এ বিষয়টি স্পশ্ট হতে উদ্ভিদ কোষ নিয়ে একটু ভাবো। চোখ বন্ধ করে উদ্ভিদ কোষ কল্পনা কর। দেখবে এর অসংখ্য অঙ্গাণুর মধ্যে প্লাস্টিড নামক একটি অঙ্গাণু আছে। এটি মূলত বর্ণ প্রদানকারী অঙ্গাণু। এর প্রকারভেদের মধ্যে রয়েছে- ক্লোরোপ্লাস্ট (ক্লোরোফিল থাকায় সবুজ বর্ণ), ক্রোমোপ্লাস্ট (সবুজ ছাড়া অন্য যে কোনো বর্ণ প্রদান করে), লিউকোপ্লাস্ট (বর্ণহীন প্লাস্টিড)। তাহলে হলুদ রঙের পাতা দেখলে বুঝবে এই পাতার কোষে ক্রোমোপ্লাস্টিডের আধিক্য রয়েছে। উদ্ভিদের কান্ড ও মূলে বর্ণহীন এক প্রকার প্লাস্টিড রয়েছে যা শর্করা সঞ্চয় করে, এদেরকে অ্যামাইলোপ্লাস্ট বলা হয়। অসংখ্য ফল পরিপক্ক হলে খুব রসালো দেখায় যেন জিহ্বায় জল আসে। এই সকল রসালো অংশ প্যারেনকাইমা কোষ দিয়ে গঠিত। অধিকাংশ প্যারেনকাইমা বর্ধিত ও বিভাজন ক্ষমতা রয়েছে। কোনো গাছের কচি পাতা ও কান্ড ক্ষত হলে কিছুদিনের মধ্যে সেই ক্ষত পূরণ হয়ে স্বাভাবিক হওয়ার প্রধান মাধ্যম প্যারেনকাইমা কোষের বিভাজন ক্ষমতা। এমনকি মাত্র একটি প্যারেনকাইমা কোষ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ হওয়া সম্ভব।
সূত্রঃ ক্যাম্পবেল বায়োলজি