-->

বোরো ধানের বীজতলার চারা সুস্থ রাখার উপায়

ধান বাংলাদেশের প্রধান ফসল। দেশের আবাদযোগ্য জমির সিংহভাগ ধানের চাষ হয়। প্রতিনিয়ত গবেষণার মাধ্যমে কৃষিবিজ্ঞানীগণ নতুন নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করছেন। পাশাপাশি নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ধানের উৎপাদন অব্যহত রাখার প্রচেষ্টা করেছেন। ধান আবাদের ধাপগুলোর মধ্যে চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ ধানের চারা সুস্থ ও সুন্দর হলে কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাবে। চলমান বোরো মৌসুমে বীজতলায় কৃষক ভাইয়েরা চারা উৎপাদন করছেন। চারা বৃদ্ধির ধাপে রয়েছে বেশ প্রতিকূল পরিবেশ। একদিকে শীত অন্যদিকে রোগ পোকামাকড়ের উপস্থিতি চারা বৃদ্ধি ব্যহত করে। ফলে বীজতলায় ধানের চারা সুস্থ ও সুন্দর রাখতে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। কৃষিবিজ্ঞানীদের মতে বীজতলায় চারার বৃদ্ধি নিম্নে উল্লেখিত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করলে সুস্থ ও সুন্দর ধানের চারা পাওয়া যাবে।

 

কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা

১) অতিরিক্ত ঠান্ডা বা শৈত প্রবাহের সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে বিকাল ৩ টা হতে পরের দিন সকাল ১০ টা পর্যন্ত ঢেকে রাখতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পলিথিন চারার পাতাকে স্পর্শ না করে। অর্থাৎ চারদিকে খুটি পুতে সামান্য উঁচু করে পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে রাখতে হবে।
২) প্রতিদিন সকালে চারার উপর জমাকৃত শিশিড় ঝাড়িয়ে দিতে হবে। দড়ি বা পাটকাঠি বা লম্বা লাঠির দুইপ্রান্তে দুইজন ধরে বীজতলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে হেঁটে গিয়ে চারার উপর জমাকৃত শিশির ঝাড়িয়ে দিতে হবে। এতে চারা ভালোভাবে বেড়ে উঠবে।
৩) বীজতলার তাপমাত্রা চারার জন্য সহনীয় রাখতে ছাই ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কারণ ছাই জমির তাপমাত্রা বাড়াতে সহযোগিতা করে। পাশাপাশি ছাইয়ে বিদ্যমান পটাশ ও জৈব উপাদান চারাগাছের বৃদ্ধির জন্য উপকারী।
৪)
  মূল জমিতে রোপনের জন্য ৩৫-৪৫ দিনের চারা ব্যবহার করতে হবে। ফলে রোপনের পর চারার মৃত্যু হার কমে, চারা সতেজ থাকে এবং ফলন বেশি হয়।

সেচ ব্যবস্থাপনা

চলমান মৌসুমে রাতের বেলা তাপমাত্র কমে যায়। ফলে রাতের বেলা বীজতলায় পর্যাপ্ত পানি ধরে রাখতে হবে যেন চারাগাছ অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে রক্ষা পায়। পরদিন সকালে আবার পানি বের করে দিতে হবে। রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পাওয়া অবধি এভাবে বীজতলায় পানি ধরে রাখতে হবে, সকালে পানি বের করে দিতে হবে।

কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা

বীজতলায় থ্রিপস পোকার আক্রমণ দেখা দিতে পারে। থ্রিপস এর আক্রমণে চারার পাতা এক পার্শ্ব থেকে মুড়িয়ে শূই এর মত সোজা হয়ে যায় এবং পরে শুকিয়ে যায়। তবে শতকার ২৫ ভাগ পাতা ক্ষতিগ্রস্থ হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। থ্রিপস দমনে ম্যালাথিয়ন ৫৭ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মি.লি. মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

রোগবালাই ব্যবস্থাপনা 

এখন ডিসেম্বর মাসের সপ্তাহ। কয়েকদিন শীতের প্রভাব বেড়েছে। চলমান আবহাওয়ার যে অবস্থা তাতে আগামী সপ্তাহে এর পরিবর্তন হবে না। ক্ষেত্র বিশেষে বীজতলায় সীডলিং ব্লাইট বা ধানের চারাপোড়া বা ঝলসানো রোগ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে রাইস ট্রান্সপ্লান্টারে ধার রোপণের জন্য প্রস্তুতকৃত ট্রেতে বাড়ন্ত ধানের চারায় এই রোগ দেখা দিতে পারে। সীডলিং ব্লাইট রোগটির ফলে বোরো মৌসুমে বীজতলায় শতকরা ২৫-৩০ ভাগ এবং ট্রেতে শতকরা ৭০-৮০ ভাগ ধানের চারা নষ্ট হয়। রোগটির লক্ষণ:- 

চিত্র: ধানের চারাপোড়া বা ঝলসানো রোগ

  • ক) বীজ অঙ্কুরিত হবার আগেই আক্রান্ত বীজ পঁচে যেতে পারে।
  • খ) অঙ্কুরিত হবার পর আক্রান্ত চারা ধীরে ধীরে শুকিয়ে মরে যেতে পারে যা পরবর্তীতে দেখতে পুড়ে যাবার মতো মনে হয়।
  • গ) শিকড় ও চারার গোড়ার দিকটা কালচে রঙের হয় এবং সাদা ছত্রাক কান্ড চারার গোড়াতে দেখা যায়। রোগাক্রান্ত চারা দুর থেকে হলদেটে দেখায় এবং পাতা কুঁচকে যাওয়ার  মতো মনে হয়।

এ রোগ সাধারণত উঁচু জমি ও শুকনা বা কম ভেজা মাটিতে বেশি হয়। সেক্ষেত্রে সীডলিং ব্লাইট রোগ দমনে আগাম অথবা রোগ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে এমিস্টারটপ অথবা সেলটিমা ২-৩ মি.লি./লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫-৭ দিন ব্যবধানে ২ বার স্প্রে করতে হবে।
২) বীজতলার চারা হলুদ হয় সেক্ষেত্র্রে প্রতি ৪ শতাংশ বীজতলার জন্য ১০০ গ্রাম থিওভিট ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।


তথ্যসূত্রঃ বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি), আন্তজার্তিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি), প্লান্টডিজেস ক্লিনিক ও ব্রি এগ্রোমেট গ্রুপ

Blogger দ্বারা পরিচালিত.