টমেটোর অজানা দশ !
আমাদের কাছে টমেটো একটি পরিচিত ফল। গোলাকার লাল বর্ণের এই ফল এখন সালাদ হিসেবে খুব জনপ্রিয়। বাড়িতে বা কোনো অনুষ্ঠানে খাবার টেবিলে টমেটোর সালাদ ছাড়া যেন জমেই না।
টমেটো একটি শীতকালীন ফসল। তবে বর্তমানে গ্রীষ্মকালে টমেটো চাষ করা হয়। মুখরোচক এই ফলে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফোলেট এবং ভিটামিন কে থাকে। ফলে এটি স্বাস্থের জন্য অনেক উপকারী। টমেটোর বহু গুণের কথা উল্লেখ থাকলেও টমেটো সম্পর্কে আমরা কতটা জানি? টমেটোর অজানা দশটি তথ্য নিয়ে লিখেছেন রফিকুল ইসলাম।
১) টমেটো মানেই গাড় লাল বর্ণের গোলাকার ফল নয়
সাধারণত টমেটো বলতে আমরা লাল বর্ণের গোলাকার আকর্ষণীয় ফলের চিত্র চোখের সামনে ভেসে উঠে। কারণ পাকলে টমেটো গাড় লাল বর্ণ ধারণ করে। তবে সকল পাকা টমেটোর বর্ণ লাল নয়। লাল ছাড়াও গোলাপী, কালো হলুদ, কালো এমনকি সাদা বর্ণের টমেটো আছে। আমাদের চাহিদা লাল বর্ণের তাই সুপার মার্কেটগুলোতে আমরা লাল টমেটো দেখি। তবে এর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভিন্ন রঙের টমেটো পাওয়া যায়।
২) টমেটোর জাত ১০ হাজারেরও বেশি
আমরা হাতেগোণা কয়েকটি টমেটোর জাতের সাথে পরিচিত। ধারণা করা হয় এখন অবধি পৃথিবীতে ৩০০০ প্রজাতির টমেটো চাষ করা হয়। এর বাইরে অসংখ্যা জাত রয়েছে। সব মিলিয়ে টমেটোর জাত সংখ্যা ১৫০০০ এর অধিক।
৩) কৌশলগতভাবে টমেটো ফল হিসেবে বিবেচিত
কৌশলগতভাবে টমেটো একটি ফল, তবে অনেকসময় এটিকে সবজি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি সবজি না ফল এই বিতর্ক জন্ম দেয় ১৮৯০ সালে। কারণ তখন ট্যাক্স আদায়ের সুবিধার্তে টমেটোকে সবজি হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
৪) টমেটো মহাশূণ্য ভ্রমণ করেছে
তথ্যটি বিস্ময়ের জন্ম দিলেও এটিই সত্য। কারণ টমেটো পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে বিশাল মহাশূণ্য ভ্রমণ করেছে। গবেষণার জন্য আন্তজার্তিক মহাকাশ স্টেশনে ৬ লক্ষ টমেটো বীজ নিয়ে যাওয়া হয়। মূলত বীজের অঙ্কুরোদগম ও বৃদ্ধির উপর ওজনহীনতা বা শূণ্য অভিকর্ষ কি ভূমিকা রাখে তা বুঝতে এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়।
৫) টমেটো স্বর্ণ ও যৌনবর্ধক হিসেবে বিবেচ্য
ষোড়শ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপের দেশগুলোতে টমেটো চাষ শুরু হয়। তখন টমেটো আকার ছিল খুব ছোট, চেরি ফলের মত এবং গায়ের রঙ সোনালি। এর গায়ের রঙের কারণে টমেটোকে বলা হতো ‘গোল্ডেন অ্যাপল’। অনেক ইউরোপের দেশের নাগরিক এই নামকরণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং স্বর্ণের নামে টমেটোর নাম দেয়। যেমন, জার্মানিতে টমেটোকে বলা হতো ‘গোল্ডাপফেল’। ফ্রান্সের নাগরিকদের বুঝানো হয় টমেটো খেলে যৌনতৃপ্তি বৃদ্ধি পায়, ফলে তারা টমেটোকে ‘লাভ অ্যাপল’ নামকরণ করে।
৬) চায়না সর্বাধিক টমেটো উতপাদন করে
একক দেশ হিসেবে চীন সবচেয়ে বেশি টমেটো উতপাদন করে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র টমেটো উতপাদনে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় (সূত্র: অ্যাটলাস বিগ)।
৭) গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছে টমেটো
ফসল উতপদানের রেকোর্ড বিবেচনায় গিনেস বুকে নাম লিখিয়েছে টমেটো। একটিমাত্র গাছ থেকে এক বছরে উতপাদিত টমেটো বিবেচনায় গিনেস বুকে স্থান করে নেয় টমেটো গাছ। মে ২০০৫ থেকে এপ্রিল ২০০৬ নাগাদ একটি টমেটো গাছ থেকে ৩২,১৯৪ টি টমেটো পাওয়া যায়। ফলসহ গাছটির ওজন ৫২২.৪৬৪ কিলোগ্রাম।
৮) টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন থাকে
প্রাকৃতিকভাবে প্রাপ্ত লাইকোপেনের সবচেয়ে বড় উতস টমেটো। লাইকোপেন একটি শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। লাইকোপেনের কারণে টমেটোর রঙ লাল হয়। টমেটো ছাড়াও তরমুজ, পেপেতে লাইকোপেন থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে লাইকোপেনে ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান বিদ্যমান।
৯) টমেটো হার্টের রোগের প্রতিষেধক
টমেটোর অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যার সাথে হার্ট ও মষ্কিষ্কের সুস্থতা জড়িত। টমেটো পটাশিয়ামের উতস যা শরীরের রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখে।
১০) স্প্যানিশ ভাষা থেকে টমেটো শব্দটির আগমন
স্প্যানিশ শব্দ tomate থেকে ইংরেজি tomato শব্দের উতপত্তি। শরীরের জন্য উপকারী এই টমেটো এখন বিশ্বের প্রায় সকল দেশে পাওয়া যায়।
সূত্র: ক্যাম্বেলসুপ