-->

কোন আম কখন খাবেন?

 জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ফলের জগতে আম সবার উপরে। আম খায় না এমন লোক দেখা পাওয়া ভার। পাশাপাশি বাংলাদেশ আম চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে দেশের বিভিন্ন জেলাতে বিভিন্ন প্রকার আম চাষ হয়। কত প্রকার আম বাংলাদেশে চাষ হয় সে সংখ্যা আমরা খুব কম মানুষ জানি। আমের জাত চিনি আর না চিনি আম খাওয়ার বেলায় আমাদের কারো আপত্তি নেই। দেশীয় গবেষকদের উদ্ভাবিত আমের পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ বিদেশী আম বাংলাদেশে চাষ হয়। গোপালভোগ, ক্ষীরসাপাতি, হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি, আশ্বিনা, আম্রপালি, লক্ষ্মণভোগ, রানিপছন্দ, হাঁড়িভাঙা, বারি-৪, বোম্বাই ইত্যাদি জাতের আমের পাশাপাশি কাটিমন, ব্রুনাই কিং, সূর্যের ডিম, ব্যানানা আম প্রভৃতি জাতের সাথে আম পরিচিত। আমের মৌসুম একই হলেও জাত ভেদে এই আম ভিন্ন সময় পেকে থাকে। আবার এলাকা ভেদে এই সকল আমের পরিপক্ক হওয়ার সময়ের মধ্যে সামান্য কিছুদিনের পার্থক্য আছে। আমের সকল জাত সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও আম পাকার সময় জানা জরুরী। কারণ আমরা বাজার থেকে বিভিন্ন আম ক্রয় করি। পাকা আমের রঙ আর ঘ্রাণ আমাদের মোহিত করে। আমের প্রতি আমাদের বিশেষ আগ্রহ থাকায় আম ব্যবসায়ীরা বিশেষ কৌশল প্রয়োগ করে। প্রাকৃতিকভাবে আম পরিপক্ক হওয়ার আগেই বাজারে পাকা আম দেখা যায়। 
কারণ অসাধু ব্যবসায়ীরা অপিরপক্ক আমে কার্বাইড জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগের মাধ্যমে আম পাকায়। এই পদার্থ প্রয়োগে আমের রঙ পরিপক্ক আমের মতো হলেও সুস্বাদু না, এমনকি রসালো হয় না। আমরা না বুঝে কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম কিনে খায় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। ব্যবসায়ীদের প্রতারণা থেকে মুক্তি পেতে কোন আম কখন পাকে জানতে হবে। মনে রাখতে হবে আম তার পরিপক্কতার ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময় মেনে চলে। তাই বাজার থেকে ভেজাল মুক্ত আম ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভোক্তা হিসেবে আমাদের দায়িত্ব রয়েছে। কোন আম কখন পাকে তা জানতে পারলে আমরা ব্যবসায়ীদের ধোঁকায় পড়ব না এবং ভেজাল মুক্ত আম খেতে পারবো। তাহলে জেনে নেওয়া যাক কয়েকটি আমের প্রাকৃতিকভাবে পরিপক্ক হওয়ার সময়-

আমের নাম 

কেনার সঠিক সময়

 যে জেলায় জন্মে

গোবিন্দভোগ 

১৫ মে থেকে ৩০ মে পর্যন্ত 

সাতক্ষীরা

গোপালভোগ 

২৫ মে থেকে ১০ জুন পর্যন্ত 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা 

রানিপছন্দ 

১ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী 

ক্ষীরসাপাতি

 ৭ থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত

 চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা

নাক ফজলি

 ৮ থেকে ২৫ জুন 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ 

বোগলাগুটি 

১২ জুন থেকে ৭ জুলাই 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর 

বারি আম-২ (লক্ষ্মণভোগ) 

১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর 

বোম্বাই 

১২ জুন থেকে ৫ জুলাই 

মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ 

ল্যাংড়া 

১৫ জুন থেকে ১৫ জুলাই 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও সাতক্ষীরা 

তোতাপুরি 

১৫ জুন থেকে ১০ জুলাই 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর 

হাঁড়িভাঙা 

২০ জুন থেকে ৫ আগস্ট

 রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলা 

আম্রপালি 

২৮ জুন থেকে ২৫ জুলাই 

সমগ্র বাংলাদেশ

সূর্যপুরী

 ১ জুলাই থেকে ২০ জুলাই

 বালিয়াডাঙ্গী, ঠাকুরগাঁও

সুরমা ফজলি

 ৩০ জুন থেকে ৩০ জুলাই 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর

ফজলি 

৫ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর ও সাতক্ষীরা

বারি-৪ ৭ 

জুলাই থেকে ২০ জুলাই : 
(রাজশাহী অঞ্চলে আগস্টের প্রথম সপ্তাহ)
 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী 

মল্লিকা ৭ 

জুলাই থেকে ৫ আগস্ট

 রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মোহনভোগ 

৮ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর

আশ্বিনা 

২০ জুলাই থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ 

গৌরমতি

 ২০ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বর 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

চৌষা 

১০ জুলাই থেকে ১০ আগস্ট 


তালিকা প্রদত্ত সময় বিবেচনা করে আমরা আম ক্রয় করবো। তাতে ভেজালমুক্ত আম খাওয়া হবে। মধুমাসের রসালো ফল আমের প্রতি যেমন আমাদের বিশেষ আগ্রহ, তেমনি আমাদের অসেচতনতার কারণে এই সুস্বাদু ফল বিষক্রিয়ার কারণ হতে পারে। নিজেদের সচেতনতার মাধ্যমে ভেজালমুক্ত আম সংগ্রহ করা সম্ভব। নিরাপদ খাবার ভক্ষণের মাধ্যমে নিজে সুস্থ থাকুন, আগামী প্রজন্মকে সূস্থ রাখুন।

তথ্য সূত্র: বিবিসি, দৈনিক প্রথম আলো, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট

 

Blogger দ্বারা পরিচালিত.