-->

বিবেকেরে জিগায়, জেগে কি তুমি? মগজ বলে সেথা আমিতো ভাবিনি!

 


বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুজ শিক্ষার্থী তার ফেসবুকে নিজের মাস্টার্স গবেষণা প্লটের ছবি দিয়ে লিখেছে' কাজটি শেষ করতে পারলাম না'।

কয়েকজনকে দেখলাম ক্যাম্পাসের হল ছেড়ে দিতে হবে বলে বাইরে বাসা খুঁজে বেড়াচ্ছে। অনেকে বাসায় উঠবে কি না, গ্রামে ফিরে যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
হঠাত এই সিদ্ধান্তের পরিণতি কি হবে জানি না বা সিদ্ধান্ত নিয়ে আমার কোনো মতামত নেই।
আমি ভাবছি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব তরুণ মেধাবীদের নিয়ে,বিশেষ করে যারা স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আছে বা শেষ করেছে। এদের কেউ স্নাতকোত্তর গবেষণা করছে, সাথে চাকুরীর পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্নাতক শেষ করে যখন একজন শিক্ষার্থী গ্রামে যায়, তাকে সামাজিকভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। কি করছ? চাকুরী পাইলা কি না? আর কতদিন বেকার থাকবা? বাবা মায়ের ঘারে আর কতদিন? এমনকি নিজ পরিবার থেকেও অপ্রত্যাশিত মন্তব্য আসে যা শুধু আহত করে না, রীতিমতো মানসিক রোগী বানিয়ে দেয়। যদিও তাদের বুঝানো মুশকিল যে আমি কত চেষ্টা করছি, কত রাত জেগে চাকুরীর পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্নাতক চলমান, আর শেষ এই দুসময়ের চিত্র পুরো আলাদা।
আমরা কি তাদের এই অবস্থা ভাবছি? আমরা কি চিন্তা করেছি, কি হবে এই শিক্ষার্থীদের?
জানি, শিক্ষার্থীদের কোনো উপায় থাকবে না, নিজের প্রয়োজনের তাগিদে উপায় বের করবে। হয়তো রাজধানী শহরের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে বা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে৷ কারণ, তাকে গবেষণা শেষ করতে হবে, চাকুরীর প্রস্তুতি নিতে হবে, গ্রামে ফিরে গিয়ে চারদিকের গা জ্বালা করা মন্তব্য কখনো নিজেকে প্রস্তুত করার উপযোগী পরিবেশ দেবে না। আবার চাকুরী না পেলে সেই আপনারাই অযোগ্য, কিচ্ছু হবে না,সব শেষ বলে মন্তব্য করবেন। তাই সৃজনশীল কাজ, উদ্ভাবনী ভাবনা আপাতত দূরে রেখে চাকুরীর জন্য চেষ্টা করতে হচ্ছে।
আর, আমার মতো যাদের টিউশনি করে চলতে হয়, তাদের তো কোনো উপায় নেই। বাসা থেকে যাদের অভিভাবকদের টাকা পাঠানোর সামর্থ্য নেই, তাদেরতো টিউশনি না করা বা ঢাকা না থাকার উপায় নেই৷
ক্যাম্পাসের হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্নাতক শেষ করে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের বা চাকুরী প্রত্যাশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কি হাজার হাজার? ক্যাম্পাসের অন্য সকলে নিজ নিজ আবাসস্থলে থাকতে পারলেও শুধুমাত্র এই কজন শিক্ষার্থী নিয়েই কি সমস্যা?
টিউশনিতে যাওয়ার পথে রাস্তায়, দোকানে মানুষের আনাগোনা, শপিং মলের চিত্র, সিনেমা হলের হালচাল, ঢাকা শহরের নিত্যপণ্যের বাজার দেখে আমার মনে হাজারো প্রশ্ন জাগে, আমাকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়ার আদেশের যৌক্তিকতা খুঁজি!
আচ্ছা, যাদের আমার মতো ঢাকা শহরে কোনো আত্মীয় নেই, বাসা ভাড়ার করার মতো সামর্থ্য নেই, এই হলে থেকে টিউশনির টাকা দিয়ে কোনোমতে চলে কিছু বইপত্র কিনে চাকুরীর প্রস্তুতি নিচ্ছি, একটি চাকুরী পেয়ে বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করছি, তাদের কথা কি একবার ভেবেছেন?
জানি, পক্ষে বিপক্ষে অনেক যুক্তি আছে। তবে কিছু যুক্তির পিছনে নিজের বিবেক, জ্ঞান, দূরদর্শিতা, পরিণতি বিবেচ্য হওয়া উচিত। সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত সার্বিক কল্যাণে,কারণ আমাদের লক্ষ্য সার্বিক উন্নয়নের।
সূত্রঃ মানসিক বিকারগ্রস্ত ভোলাদার ডায়েরি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.