-->

পঁচা কাঠালের আচার!

 

একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখান থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে বের হয় সবাই। শিক্ষা দেন দেশসেরা মেধাবীরা, যারা আমাদের কাছে দেবতুল্য, তারা আমাদের অভিভাবক। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে মৌখিক পরীক্ষার অপেক্ষায় বারান্দায় দাড়িয়ে আমরা।
ডাক পড়লো বান্ধবী সুনন্দার, ভাইবা বোর্ডে ডিপার্টমেন্ট প্রধান যিনি জনপ্রিয় গবেষক হিসেবে সমাদৃত, নিজের কথা বলা, লেকচারে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেন, আর নিজের লেখা বই ক্লাসে পড়ান এবং এটা নিয়ে গর্ব করেন।
যাইহোক সুনন্দা প্রবেশ করল, বরাবর মেধাবী হওয়ায় সে নিজের ব্যাপারে বেশ অসচেতন, পড়াশোনা আর নিজের ভবিষ্যৎ তার কাছে মুখ্য। সালাম দিয়ে প্রবেশ করতেই ভাইবা গ্রহণকারী বসতে বললেন।
প্রশ্ন শুরু হলো-
- কি নাম তোমার?
-সুনন্দা ত্রিপটক
-বাহ সুন্দর নাম তো, কে রেখেছে?
-আমার বাবা
-সত্যি তুমি তোমার নামের মত সুন্দর।
-ধন্যবাদ
-আচ্ছা, এত ভয়ে কথা বলছো কেন, বি ইজি। তুমিতো অনেক মেধাবী। একটা কথা, তুমি অনেক সুন্দরী, কিন্তু নিজেকে এভাবে অগোছালো রাখো কেন। আজ ভাইবা, অন্তত নিজেকে সুন্দর করে গুছিয়ে পরিপাটি করে আসতে। তোমাকে কিন্তু আধুনিক পোশাকে সেই লাগবে।
এসব প্রশ্ন শুনে বিরক্ত সুনন্দা। বিশেষ করে ভাইবা গ্রহীতার চোখের দৃষ্টি। সবসময় উনার লেকচার, নীতিকথা,জীবন গড়তে কি করণীয়, বিষয়ভিত্তিক লেকচার শুনে অভ্যস্ত সুনন্দা। আজ ভাইবা বোর্ডে যেন অন্য কাউকে দেখছে। যে বিষয়ের পরীক্ষা তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন না হওয়ায় বেশি অবাক হচ্ছে। কারণ এর আগে তার কয়েকজন বন্ধু ভাইবা দিছে, তাদের কাউকে পাঁচ মিনিটের বেশি রাখে নি।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর মূল বিষয়ের কয়েকটি প্রশ্ন করলেন উনি৷ যদিও এর মাঝে সুনন্দার সুবিধা- অসুবিধা, পরিবার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। সুনন্দা কৌশলে এড়িয়ে গেছে।
ভাইবা শেষ হওয়া মাত্র নিঃশ্বাস ছাড়ল সে।
তবে বের হওয়ার সময় 'আমার সাথে আলাদা ভাবে দেখা করো, পরীক্ষার রেজাল্ট নিয়ে ভেবো না, তোমাকে অনেক বড় অবস্থানে দেখতে চাই, এর জন্য যে কোনো হেল্প লাগলে বলো' কথাটি কানে বাজছে।
এই ঘটনা শুনার পর ভোলা দার শরীর জ্বলছে। যদিও সে ক্লাসের সবচেয়ে দুর্বল ছাত্র। পড়াশোনা নাই, পরীক্ষাও ভালো হয় না। ভাইবা বোর্ডে প্রশ্ন শুনে নাদানের মত হা করে থাকে। তবে ক্লাসের একজন বান্ধবীর এমন ভাইবা অভিজ্ঞতা তাকে অবাক করেছে। মন চাইছে উনাকে উচিত শিক্ষা দিতে।
কয়েকজন বন্ধুর সাথে আলাপ হলো। কেউ বিশ্বাস করতে চাই না, সবার কথা এমন পীরের মত মানুষ এভাবে বলতে পারেন না।
থেমে নেই ভোলা দা। একদিন বিতর্ক ক্লাবে অনুশীলনের সময় সিনিয়র এক আপুর সাথে কথা হলো। অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিবার সর্বোচ্চ ফলাফলের অধিকারী এই আপু৷ দেশসেরা বিতার্কিকদের একজন। ভোলা দা তার থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিষয় জানে। ভোলা দা ছাত্র হিসেবে বলদ প্রকৃতির হলেও এই আপু তাকে উতসাহ দেন, নিজের ভাইয়ের মত দেখেন। বিশেষ করে ভোলা দার পাগলামি কাজে উৎসাহ দেন তিনি৷
বান্ধবীর সাথে ঘটা ভাইবার বিষয়টি উনাকে বলে কোনো পরামর্শ পাওয়া যাবে বলে ভাবলেন ভোলা দা। পুরা ঘটনা বলার পর আপু স্বাভাবিক। মনে হলো এইটা খুব সাধারণ ঘটনা। এমনটা বহুবার শুনেছেন।
আপুর মুখের দিকে চেয়ে ভোলা দা বললেন
-আপু, কিছু বললেন না যে? একজন দেবতূল্য মানুষ এমন হয় কিভাবে?
বড় আপু চেয়ে আছেন পশিচমের জানালার দিকে, কিছুক্ষণ পর মুখ ঘুরিয়ে ভোলা দার দিকে তাকিয়ে বললেন-
-উনি একটা লুইচ্চা!
বি.দ্রঃ বাস্তবতা মিশ্রিত কাল্পনিক গল্প।
উৎসঃ মানসিক রোগাগ্রস্ত ভোলা দার ডায়েরি।
Blogger দ্বারা পরিচালিত.