মাকাল ফলের আমসত্ত্ব !!
ভরা মজলিসে ঢুকে পড়েছে একজন বয়স্ক মানুষ, নাম পঁচিমদ্দি। পরনে লুঙ্গি, গায়ে ছেড়া জামা। হয়তো বিশেষ কোনো কাজ ছিল। গেটে দাড়ানো মোটা গোঁফওয়ালা দাড়োয়ানের থেকে অনেক অনুরোধ করে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি মিলেছে। চেহারায় অভাবের ছাপ, চোখেমুখে ক্লান্তি আর বিনয়ের আভা। অনেক ঘর ঘুরে বিফল হলে সাহায্যপ্রার্থী যেভাবে নিজেকে তুলে ধরে।
মজলিসের মধ্যমনি বড় চেয়ারে বসে, তার সামনে অনেকগুলো চেয়ারা রঙ বেরঙের পোশাকে জনাপনোরো সদস্য। সবার চেহারা উচ্চসমাজের ছাঁপ, হাসি হাসি মুখ, কারো আবার দাঁতকেলানো চাহনী। বোঝা যায় তারা সমাজের শ্রেষ্ট মানুষের দাবিদার। প্রত্যেকের সামনের প্লেটে বিভিন্ন ফল ও মিষ্টান্ন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হয়েছেনে এটা স্পষ্ট। খাবার সামনে থাকলেও কেউ খাচ্ছেন না, তারা সামনের কোর্ট টাই পরিহিত ব্যক্তির কথা শুনছেন।
পঁচিমদ্দি ভিতরে ঢুকতেই টাই পরিহিত ব্যক্তির চেহারা ছানাবোড়া, একটু আগের মায়াবী চাহনী নেই, হাসি উবে গেছে। মুখ দিয়ে বের হলো-
-এই চাষাভুষারে কে ঢুকতে দিছে? এই আপনার কমন সেন্স নেই? আপনি জানেন না আপনি কোথায় এসেছেন? কে ঢুকতে দিলো আপনাকে?
অন্য সবাই হতভম্ব। সবাই মুখ ঘুরিয়ে পঁচিমদ্দির দিকে চেয়ে আছে।
পঁচিমদ্দি বেশ লজ্জা পেলো। কাচুমাচু হয়ে বলল-
-বাবা আমি এক বড় ঝামেলায় আছি। এই কাগজটা একটু দেখে দিবেন? অমক অফিসে গেছিলাম ফিরায়ে দিছে। এভাবে ্০৫ বছর ঘুরছি। সমাধান হয় না, সবাই টাকা চাই। অনেক দিছি। তাও আমার হকের জিনিস অন্যরা জোর করে নিয়ে নিছে। কাল একজন বলল, আপনার কাছে গেলে সমাধান হবে। যদি আপনি একটু দেখতেন। দয়া করেন বাবা, আমি যেন মরার আগে আমার জিনিস ফিরে পায়।
টাই পরিহিত ব্যক্তি চরম বিরক্ত, মোবাইলে যেন কার উপর রাগ ঝারলেন। অবশ্য কথাগুলো ছিল পঁচিমদ্দির মত উটকো ঝামেলা দেখে। কয়েকজন ব্যক্তিকে দেখিয়ে বললেন-
-এদের চিনেন?
-না
এবার টাই পরিহিত ব্যক্তি পঁচিমদ্দিকে বললেন-
-এদের কেউ তো আপনাকে চিনেনা, এরা আপনার এলাকার গণ্যমাণ্য ব্যক্তি। এরা না চিনলে আপনি কিভাবে সেবা আশা করেন।
পঁচিমদ্দি চেয়ারে বসা একজনকে দেখে মনে মনে ভাবলেন, এইতো সেই ভাই। কাল সন্ধ্যায় ওর কাছে গেছি। আমার এই কাজ করে দেওয়ার নাম করে কত টাকা নিছে।
বড়ই বিপদে পড়ে গেলেন পঁচিমদ্দি। লজ্জায়, অপমানে লাল হয়ে রুম থেকে বের হয়ে এলেন।
শুরু হলো সভা। উচ্চহাসির রোল। “আরে বাদ দেন তো, এসব আবাল নিয়ে ভাববেন না, ন্যূনতম কার্টেসি জানে না, নেন নেন আপেল নেন, আরে মিষ্টিটা কিন্তু সেই, খান”
কোনায় বসা ভোলা দা হাতের তালু দিয়ে চোখের সামান্য আসা জল মুছে প্লেট থাকে এক টুকরো আপেল নিল।
শুরু হলো “জনসভায় আমাদের অর্জন” নিয়ে আয়োজিত সভার শেষাংশ।
পরের দিন ফলাও করে প্রচার, সাথে স্যুট টাই পরিহিত ব্যক্তির হাসিমাখা ছবি।
শিরোনাম-
“জনসভায় প্রয়োজনে নিজের জীবন বিসর্জন দিতে প্রস্তুত বকলেস মিয়া”