-->

প্রতিভার অসীমতায় লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি




১৪৫২ সালের ১৫ এপ্রিল ইতালির ভিঞ্চিতে কুমারী ক্যাটরিনার গর্ভে জন্মে লিওনার্দো দি সের পিয়োরো দা ভিঞ্চি। ধরিত্রী যত মহাপুরুষ জন্ম দিয়েছে তাঁদের সবার শৈশবেই অসম্ভব মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। লিওনার্দোর শৈশব লিপিবদ্ধ নয়। তাই শৈশবের লিওনার্দোকে বুঝা শক্ত। তবে একটি ঘটনা এই বিষয়টিকে স্পষ্ট করে। তিনি ছোট বেলায় এক পাহাড়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি একটা গুহা আবিষ্কার করেন। গুহাটি ছিল অন্ধকার,আর তাঁর মনে হচ্ছিল এর ভিতরে কোন অতিকায় দৈত্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু তাঁর অদম্য ইচ্ছায় তিনি গুহার রহস্য ভেদ করেন। এর মাধ্যমে  লিওনার্দোর জিজ্ঞাসু মনের পরিচয় মিলে। দ্য লাইফ অফ লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি সিনেমাতেও ভিঞ্চিকে আমরা পাই জিজ্ঞাসু এক কিশোর হিসেবে। লিওনার্দো মাতৃ¯েœহ থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন কিন্তু এটিই হয়ত তাঁকে শক্ত হতেও শিখিয়েছিল। অন্যভাবে বললে তাঁর জিজ্ঞাসু মনের প্রতি প্রকৃতি ঠিক করে দেবার লোকও ছিল না। তাই প্রকৃতিকে নিয়ে যেখানেই প্রশ্ন জেগেছে তার অনুসন্ধানে ছুটেছে বালক মন। কৈশোরে লিওনার্দো সে  সময়ের সফল চিত্রকর ভ্যারিচ্চিও এর ওয়ার্কশপে যোগ  দেন। তিনি শিখেছেন কিন্তু তার প্রয়োগ  করেছেন নিজের মত করে। বেশির ভাগ মানুষ অন্য কারো মত হতে চাই বা তাদের হতে হয় বলেই হয়ত সবাই “দ্যা ভিঞ্চি” হয় না। ভিঞ্চি বরাবরই তার ব্যাক্তিগত জীবন গোপন রাখতে পছন্দ করতেন। যেহেতু তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর জীবনের কোন লিপি লেখা হয় নি তাই ব্যাক্তি ভিঞ্চিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। 
তবে তিনি যে স্থির বুদ্ধির এবং খুতখুতে স্বভাবের ছিলেন তা তাঁর অসমাপ্ত চিত্র কর্মগুলো দেখে সহজেই ধারণা করা যায়। পৃথিবীতে হয়ত আরও অনেকেই সময়কে ছাড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। কিন্তু লিওনার্দো এখানেই অনন্য যে,তিনি শুধু সময়কে কল্পনা দিয়েই ছাড়িয়ে যেতে চান নি। বরং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে তার মডেলও তৈরি করেছেন। উড়ন যন্ত্রের কথায় ধরা যাক না। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে এই তথ্য পাওয়া যায় যে উড়ন যন্ত্র নিয়ে মালমার্সবুরি চার্চে লিওনার্দোর শতবর্ষ পূর্বে গবেষণা হয়েছিল। তবে তাঁর পান্ডুলিপিতে পাওয়া পাখির উড়বার নানান বর্ণনা এটিই প্রমাণ করে যে,যদি এ ধারণা তিনি অন্য কোথা থেকে নিয়েও থাকেন তাঁকে অন্ধ অনুকরণ করতে চান নি। নিজের পর্যবেক্ষণেই তিনি এ মডেল তৈরি করেছিলেন। সেই সময়ের শিল্পীদের সম্পর্কে আমাদের মাঝে এই ধারণা প্রচলিত যে তাঁদের সকল সৃষ্টি তাঁদের মনের ইচ্ছাতেই হয়েছে। লিওনার্দো কিন্তু এই ধারণাকে নাড়া দিয়ে যান। দ্যা লাস্ট সাপার অঙ্কন,শহর রক্ষার বাঙ্কার নির্মাণ কিংবা বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্রের মডেল তিনি তৈরি করেছিলেন অন্যের ইচ্ছায় বা সময়ের প্রয়োজনে। খোদ মোনালিসা নিয়েই তো কত বিতর্ক চলে। তবে সব বিতর্কের মাধ্যমে এটুকু স্পষ্ট যে নিজেকে প্রকৃতির মত করে দুর্বোধ্য করে রাখবার একটি প্রয়াস তাঁর মাঝে ছিল। যেন বলতে চেয়েছেন খুঁজো,ভাব,আবিষ্কার কর। নইলে তাঁর মৃত্যুর(২মে,১৫১৯খ্রিঃ) দুইশত বছর পরে পাওয়া পাঁচ হাজার পাতার লিপিই বা উল্টো করে লিখা থাকবে কেন?

লেখক: মোঃ আলিমুল রাজি রাজ 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.