অণুজীবের বিস্ময়কর গল্প
আমাদের চারপাশে কত শত অনুঝীব
ছড়িয়ে আছে তার কোন ইয়াত্ত নেই। এমনকি তোমার পরিষ্কার হাতেও অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে
পরীক্ষা করলে দেখা যাবে লাখো লাখো অনুজীব। পৃথিবীতে সর্বাধিক বিস্তৃত এমন কিছু অণুজীবের
কিছু মজার বিষয় নিয়ে লিখেছেন -শুভাশীষ সাহা শুভ
১। বাড়ির পাশের বাগানের এক চামচ পরিমাণ মাটিতে প্রায় ১ বিলিয়ন ব্যাকটেরিয়া,
১,২০,০০০ ছত্রাক ও ২৫,০০০ শৈবাল থাকতে পারে।
২। এই পৃথিবীতে ব্যাকটেরিয়ার আবির্ভাব
ঘটেছে ডায়নোসরদের আবির্ভাবেরও হাজার হাজার বছর আগে।
৩। মানুষের দেহে মোট যে পরিমাণ কোষ আছে তার
চেয়ে প্রায় ১০ গুণ বেশি সংখ্যক ব্যাকটেরিয়া মানুষের অন্ত্রে মিথোজীবী হয়ে অবস্থান
করে, যার পরিমাণ প্রায় ১ কেজির কাছাকাছি।
৪। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ছত্রাক পাওয়া গিয়েছে
আমেরিকার জাতীয় বনে। এই ছত্রাকের নাম হানি মাশরুম ছত্রাক, যা ঐ বনের প্রায় ৮.৯
বর্গ কিলোমিটার জায়গা দখল করে আছে।
৫। আমাদের মুখগহব্বরে স্বাভাবিক অবস্থায়
প্রায় ৫০০- ১০০০ ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ৭০ থেকে ৮০ ধরনের ছত্রাক থাকে। তবে এগুলো
সাধারণত কোন রোগ সৃষ্টি করে না।
৬। যদিও অধিকাংশ
ব্যাকটেরিয়া অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না তবে ব্যাকটেরিয়া জগতের সবচেয়ে বড় সদস্যকে কিন্তু
খালি চোখে দেখা যায়, তার নাম Thiomargarita namibiensis। এই বাহারি নামের ও একটি
অর্থ আছে যা হল ‘নাম্বিয়ার সালফারযুক্ত মুক্তা’
৭। Taenia saginata নামে একধরণের ফিতা কৃমি যা গরু হতে মানুষের
দেহে আসে। এই ফিতা কৃমি দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। কী ভাবতে
একটু কষ্ট হচ্ছে?পাশের ছবিতে দেখো।
৮। সবচেয়ে ছোট
ব্যাকটেরিয়া মাইকোপ্লাজমা গনভুক্ত। এরা যে শুধু সাইজে ছোট তাই নয় পূর্বে এদের
ভাইরাস মনে করা হত। এছাড়া সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কোষ প্রাচীর থাকলেও এদের কোন কোষ
প্রাচীর নেই এবং এদের কোষ ঝিল্লিতে সুকেন্দ্রিক কোষের ন্যায় কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। এই গনভুক্ত একটি
ব্যাকটেরিয়া হল Mycoplasma pneumonia যা আমাদের দেহে বিশেষ ধরনের নিউমোনিয়া
তৈরি করে।
৯। অতি সাম্প্রতিক কালে বিজ্ঞানীরা ২৫০
মিলিয়ন বছর আগের ব্যাকটেরিয়ার স্পোর ( প্রতিকূল পরিবেশে ব্যাকটেরিয়ার ধারণকৃত রূপ)
থেকে নতুন ব্যাকটেরিয়া জন্ম দিতে সক্ষম হয়েছেন। এই স্পোরটিকে মাটির মধ্যে থাকা লবণ
কণার মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল।
১০। Helicobacter pylori নামে ব্যাকটেরিয়ার কারণে যে পাকস্থলীতে
আলসার (এক ধরনের ক্ষত) হতে পারে তা প্রমাণ করার জন্য একজন বিজ্ঞানী এক পেট্রিডিস
ভর্তি ব্যাকটেরিয়া খেয়ে নেন। কিছু দিনের মধ্যেই তার আলসার হয় এবং তাঁর তত্ত্ব
প্রমাণিত হয়। এ জন্য তিনি ২০০৫ সালে নোবেল পুরস্কারও পান। বিজ্ঞানীর নাম Barry Marshall ।
১১। জীবাণুমুক্ত কাগজের টিস্যু দিয়ে হাত
মুছে ফেলা গরম বাতাসে হাত শুকানোর চেয়ে ভালো। গরম বাতাসে হাত শুকালে হাতে থাকা
ব্যাকটেরিয়া উষ্ণ বাতাস পেয়ে আরও সংখ্যায় বেড়ে যেতে পারে।
১২। ঠিক মত ছড়িয়ে গেলে এক চামচ সমপরিমাণ Clostridium
botulinum নামক ব্যাকটেরিয়া সমগ্র আমেরিকার জনসমষ্টির সমপরিমাণ লোকের মৃত্যুর কারণ
হতে পারে। এটি মানব দেহের মাংসপেশিকে প্যারালাইসিস করে দেয়।