মহাকাশে বাংলাদেশ,আমাদের স্যাটেলাইট ও আমার স্বপ্ন !!
যেন সপ্ন ছিল এত
বছর। এখন তা বাস্তবায়নের পথে। মহাকাশ গবেষণা বা মহাকাশ বিষয়ক উচ্চ শিক্ষার প্রাতাষ্ঠানিক সুযোগ না থাকলেও মহাকাশ নিয়ে আগ্রহ প্রতিটি তরুণ বাংলাদেশীর। আমিও এর ব্যতিক্রম নয়।
২০০৭ সালে যখন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলাম তখন থেকে তা
বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। একটা সময় ছিল যখন রাত জেগে মহাকাশ, গ্রহ, অন্য গ্রহের বসবাস উপযোগীতা সম্পর্কে জানা, নিয়মিত নাসার ওয়েবসাইটে গিয়ে আপডেট তথ্য জানা ছিল আমার নেশা। জানতাম এটি আমার ভবিষ্যত না,তবে এটি ছিল নেশার মত। মহাকাশ ভ্রমণের সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীতার মাধ্যমে হওয়ায় বিভিন্ন দেশের তরুণ আগ্রহীদের সাথে কথা হত, মহাকাশ গবেষকদের সাথেও আলোচনা হত। ভাবতে অবাক লাগতো মহাকাশ,রকেট, মহাকাশ স্টেশন। ভাবতাম ইশ আমি মহাকাশ গবেষক হব, মহাকাশযানে চড়ব। যাইহোক ২০০৭ সালে মহাকাশ ভ্রমণে সুযোগ পাওয়ার সুবাদে প্রথম ঢাকায় আসার সুযোগ হয়েছিল প্রিয় শরিফ ভাইয়ের সাথে, তখন তিনি বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে কর্মরত ছিলাম। সারারাত বাসে তাকে হাজারো প্রশ্ন করছিলাম, অদম্য মেধাবী এই মানুষটি বিরক্ত না হয়ে হাজারো প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন। তার কাছে আমার প্রশ্ন ছিল-বাংলাদেশে মহাকাশ গবেষণা বিষয়ে কি কাজ হয়? তার উত্তর ছিল স্পারসো সামান্য কিছু কাজ করে, এর বাইরে না। সত্যি পরের দিন ভোর বেলা যখন আগারগাও-মিরপুর রাস্তা দিয়ে মিরপুর-১১ তে বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির অফিসে যাওয়ার পথে শরিফ ভাই দেখালেন স্পারসো ভবন। ভোরের কুয়াশায় আবছা ভবন আমাকে তৃপ্ত করে নি। আমার মনে হয়েছে মহাকাশ গবেষণা ঠিক তেমনটি হয় না। যাই হোক তরুন মনে মহাকাশের প্রতি আগ্রহ থেকে হয়তো স্বপ্ন ছিল আমি মহাকাশ ভ্রমণ করে এসে মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করব। মহাকাশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ যেন আমাকে মহাকাশে বাংলাদেশের অবস্থান বিষয়ে জানতে
বেশ আগ্রহী করেছিল। পরবর্তীতে বিজ্ঞান কর্মী হিসেবে কাজের সুবাদে আনেক স্কুল-কলেজে কথা বলার
সুযোগ হয়েছে। তাদের বেশির ভাগের প্রশ্ন মহাকাশ নিয়ে আমাদের অবস্থান, মহাকাশে আমাদের স্যাটেলাইট নেই কেন ইত্যাদি। তবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় এসেছে। সমগ্র বাংলাদেশী স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে এখন।
কারণ মহাকাশে আমার প্রিয় মাতৃভূমির প্রতিনিধিত্ব করবে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট।
৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের মালিক দেশগুলোর অভিজাত ক্লাবে হব
আমরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ৩টা ৪৭
মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বঙ্গবন্ধু-১ নিজস্ব কক্ষপথে যাত্রা শুরুর কথা থাকলেও আজ উৎক্ষেপন করা হবে।
ফ্যালকন ৯
মহাকাশযানে আমাদের স্যাটেলাইট যাবে মহাকাশে, অবস্থান করবে পৃথিবীর কক্ষপথে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের অবস্থান হবে ১১৯ দশমিক ১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে।
বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মূল অবকাঠামো তৈরি করেছে ফ্রান্সের মহাকাশ সংস্থা থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস। স্যাটেলাইট তৈরি এবং ওড়ানোর কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এ জন্য গাজীপুরের জয়দেবপুরে তৈরি গ্রাউন্ড কনট্রোল স্টেশন (ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রণের মূল কেন্দ্র হিসেবে কাজ করবে। আর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হবে রাঙামাটির বেতবুনিয়া গ্রাউন্ড স্টেশন।
আমাদের যাত্রা শুরু। এখন হবে আরোও সহজতর প্রযুক্তি। এখানেই শেষ নয়। মহাকাশ গবেষণায় যুক্ত হতে হবে আমাদের। বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা বিজ্ঞান সংগঠন মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহী করলেও গড়ে তুলতে হবে সরকারী প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের আগ্রহী করতে হবে মহাকাশ বিষয়ক পড়াশোনায়। বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে হবে যেখানে মহাকাশ গবেষণা বিষয়ে পড়ানো হবে। হবে উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা। আর এভাবেই স্যাটেলাইটের মত মহাকাশে পাড়ি দেবে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা, তারা গবেষণা করবে গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে।