-->

রসায়নের বর্ণান্ধ বিজ্ঞানী


আধুনিক রসায়নের ক্ষেত্রে একটি হিরন্ময় নাম জন ডাল্টন। পরমাণুবাদকে বৈজ্ঞানীক রূপ প্রদানে তার নাম ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছে। ১৭৬৬ খ্রিস্টাব্দে ৬ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ডে ইগলসফিল্ড নামক একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ডালটন। গ্রাম্য বিদ্যালয়ে  তার প্রথম পড়াশোনা শুরু । অতি বাল্যকাল থেকেই তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটেছিল। কথিত আছে, বিদ্যালয়ে পাঠকালেই তিনি গ্রিক ও ল্যাটিন নামক দুটি দুরূহ ভাষাকে আয়ত্ত করে নিয়েছিলেন। তিনি এক অন্ধ দার্শনিকের কাছ থেকে বিজ্ঞান শিক্ষায় প্রেরণা পেয়েছিলেন। তাই ছেলেবেলায থেকেই বিজ্ঞান এবং গণিতের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করতেন ভয়ানকভাবে। বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করার পর ডালটন বিজ্ঞানে উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য ভর্তি হন কলেজে। সেখানেও রেখেছিলেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর। অবশেষে বিজ্ঞানে এম.এস.সি ডিগ্রি লাভের পর ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যায়ে যোগদান করেন অধ্যাপকরূপে। সেই থেকেই তার আরম্ভ হয় গবেষণা। তখন তার বয়স  ছিল মাত্র পঁচিশ বছর। 
জন ডাল্টনের মৌলিক গবেষণাগুলো  প্রথম ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। তার গবেষণার বিষয়বস্তু  ছিল গ্যাসীয় পদার্থ। ১৮০০ খ্রিস্টব্দে তিনি গ্যাসের আংশিক চাপ এবং গ্যাস প্রসারণ সূত্র প্রকাশ করেন। এই সূত্র দুটি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞানীদের মধ্যে একটা সাড়া পড়েছিল। তারা সবাই সূত্রগুলো স্বীকার করে নেন। ফলে  জন ডাল্টন বিশিষ্ট রসায়ন বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর তিনি পরমাণুর চিন্তা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি কিছু তত্ত্ব প্রদান করেন যা পরমানুবাদ হিসেবে পরিচিত। যদিও তার পরমাণুবাদে কিছু ত্রুটি ছিল, তবে তা রসায়ন গবেষণার নতুন দ্বার উন্মোচন করে। এছাড়াও ডাল্টনের অন্য একটি গবেষণা ডাল্টনিজম বা বর্ণান্ধতা। লাল-সবুজ রঙের বর্ণান্ধতা সম্পর্কিত ব্যাখ্যা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। মজার ব্যাপার হল, এই বর্ণান্ধতা বা ডাল্টনিজমের যিনি জনক, তিনি নিজেই ছিলেন একজন বর্ণান্ধ। তিনি মজা করে বলতেন, তার নাকি জন্ম থেকেই লাল-সবুজ উপলব্ধি করার গ্রাহক কোষটি নেই। 
জন ডাল্টন তার জীবদ্দশার পুরোটা সময় বিজ্ঞান সাধনায় ব্যয় করেছেন। এমনকি ৭৮ বছর বয়সী ডাল্টন বিয়ে পর্যন্ত করেন নি। জীবদ্দশাতেই বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক হিসেবে যথেষ্ট সুনাম অর্জন করেছিলেন। তৎকালীন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অন্যতম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন। জীবনে বহু সম্মান এবং পুরস্কার লাভ করেছিলেন তিনি। জীবদ্দশাতেই ডাল্টনের একটি ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছিল যা ম্যানচেস্টার টাউন হলে রাখা হয়েছে। ভাস্কর্যটিতে লেখা আছে, “সম্ভবত তিনিই একজন বিজ্ঞানী যার জীবদ্দশাতেই তার প্রতিকৃতি তৈরি হয়েছে”। লন্ডনের বিখ্যাত রয়্যাল সোসাইটি ১৮২৬ খ্রিস্টাব্দে তার প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মানসূচক ফেলোশীপ প্রদান করেন। পরবর্তিতে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি আবাসিক হলের নাম “ডাল্টন হল” রাখা হয়। রয়্যাল সোসাইটির একটি শাখা তার নামানুসারে “ডাল্টন হল” রাখা হয়। এমনিভাবে আজও বিজ্ঞান জগতে পরিচিত হয়ে আছেন জন ডাণ্টন। ১৮৪৪ সালের ২৬ জুলাই এই মহান বিজ্ঞানী পরলোক গমন করেন। 

লেখকঃ মাহমুদুল হাসান লিখন, বিজ্ঞানকর্মী, লেখক, বিতার্কিক ও উদ্যোক্তা 
Blogger দ্বারা পরিচালিত.