জোসেলীন বেল বার্ণেল – পালসার আবিষ্কারক
আমাদের
এই মহাবিশ্ব আসলে এক রহস্যময় জগত। মহাবিশ্বের এসব বিশ্বয়কর বস্তুর একটি হল পালসার
বা নিউট্রন স্টার। প্রথম পালসারটি যখন আবিষ্কার হয় তখন এর নিয়মিত পর্যায়ক্রম
বিজ্ঞানীদের ধাঁধায় ফেলে দিয়েছিল। প্রথম আবিষ্কৃত পালসারটির ১.৩৩ সেকেন্ডের
ব্যবধানে উদ্ভূত পালস কারো কারো মনে পৃথিবীর বাইরের উন্নত সভ্যতার ধারণার জন্ম
দিয়েছিল। মজা করে এটির নাম রাখা হয়েছিল এলজিএম (LGM:little green man signal)। পরবর্তিতে মহাকাশের অন্য প্রান্তে ভিন্ন পর্যায়ক্রমের
দ্বিতীয় পালসারটি আবিষ্কার হওয়ার পর এ ধারণার ভুল ভাঙ্গে। এই পালসার আসলে একটি অত্যন্ত চৌম্বক আবর্তিত নিউট্রন তারকা যা একটি
নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কে উচ্চ তীব্রতার তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ নির্দিষ্ট দিকে বিকিরন করে।
এই তরঙ্গ পালস হিসাবে লক্ষ্য করা যায় বিধায় এর নাম পালসার এবং রেডিও
জ্যোতির্বিজ্ঞানী জোসেলীন বেল বার্ণেল ১৯৬৭ সালে প্রথম পালসার আবিষ্কার করেন।
জোসেলীন
এর জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৫ই জুলাই উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে। তার বাবা ছিলেন
আরমাঘ অবজারভেটরীর একজন স্থপতি এবং এখানেই তার শৈশবের অধিকাংশ সময় কেটেছে। কৈশোরেই
তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের অনেক বই পড়ে ফেলেন এবং এখানকার সবাই এ বিষয়ে তার আগ্রহকে
আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি পড়াশুনা করেছেন লুরগান কলেজে
এবং স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ সালে
কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এন্থনি হিউইশ এর অধীনে পিএইচডি করেন। এছাড়া তিনি
৮১.৫ মেগাহার্টজ ক্ষমতাসম্পন্ন রেডিও টেলিস্কোপ তৈরী করেন। তিনি বিকিরন উৎসের
আন্তগ্রহ স্ফুলিঙ্গায়ন নিয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯৬৭ সালে বেল যখন টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া
মাইলের পর মাইল সমান সংকেত বিশ্লেষণ করছিলেন তখন কিছু অপরিচিত সংকেত দেখতে পান এবং
এগুলো কোয়াসার থেকে আসা খুব দ্রুতগামী এবং পর্যায়ক্রমিক সংকেত মনে হতে থাকে। এর
ব্যাখ্যা খুজতে গিয়ে তারা নক্ষত্র ও মানবসৃষ্ট রেডিও কম্পাঙ্কের তরঙ্গগুলিকে কারন
হিসাবে বাতিল করেন। তাত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে তারা সিদ্ধান্ত দেন এ
সংকেতগুলো অবশ্যই দ্রুত ঘূর্ণায়মান, অধিক ঘন কোন কলাপসড নক্ষত্র থেকে আসছে এবং এগুলোর
নাম দেওয়া হয় পালসার। এ পালসার আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৪ সালে জোসেলীন এর শিক্ষক
এন্থনি হিউইশকে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া হয়। জোসেলীনকে পুরষ্কার থেকে
বঞ্চিত করার কারনে তখন প্রচুর বিতর্কের সৃষ্টি হয়। অবশ্য সারা পৃথিবী আজও পালসার
এর আবিষ্কারক হিসাবে জোসেলীন বেল বার্ণেলকেই স্বীকার করে।
লেখকঃ bw›`Zv `vm